মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে এবং মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইনের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ রোববার (১৫ এপ্রিল) সকালে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন সারাদেশ থেকে আসা মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানেরা।
সমাবেশ থেকে ছয়টি দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলো হলো-
- মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন করতে হবে
- যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের স্থাবর-অস্থাবর সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রের আয়ত্তে আনতে হবে
- যুদ্ধাপরাধীদের সন্তানদের তালিকা প্রকাশ করতে হবে
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে যারা সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যানার ব্যবহার করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নেপথ্যে থেকে অরাজকতার চেষ্টা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
- আন্দোলনের নামে যারা বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং
- যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিতভাবে অপপ্রচার চালিয়ে দেশে অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সমাবেশ থেকে পরবর্তী ৪টি কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচিগুলো হল, ২৫ এপ্রিল বেলা ১১টায় সব জেলা-উপজেলা পর্যায়ে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাবিনামা পেশ। ৩০ এপ্রিল বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সব জেলা-উপজেলা প্রতিনিধিদের নিয়ে সম্মিলিতভাবে দাবিনামা পেশ। ৮ মে সংবাদ সম্মেলন এবং অনুরোধপত্র প্রদান কর্মসূচি। ৯ জুন বিকাল ৩টায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ।
সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজার সঞ্চালনায় সভাপতির বক্তব্যে মেহেদী হাসা বলেন, ‘আমরা কোনও কোটার দাবি নিয়ে এখানে আসিনি। আমরা সরকারের কাছে দাবি নিয়ে এসেছি – ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করেছেন, কিন্তু সম্প্রতি সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ব্যানারের নামে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেমেছে রাজাকরের সন্তানেরা। তারা একদিকে জয় বাংলা স্লোগান দিচ্ছে। অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ভাঙচুর ও উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ চালিয়েছে। আমরা এসব ঘটনার বিচার চাই।’
তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে আরও বলেন, ‘আমরা আপনার সঙ্গে আগেও ছিলাম, এখনও আছি। মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখার দাবি জানাচ্ছি আপনার কাছে।’
মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক কায়সার নাসিম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৭ সালে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য কোটাটা দিয়েছিলেন, এই কোটার জন্য আমরা কোনও আন্দোলন সংগ্রাম করিনি। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে তিনি পরিস্থিতে পড়ে কোটা প্রথা বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্ত আজকের গণসমাবেশ থেকে আমাদের প্রধান দাবি হল, মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সম্মান সুরক্ষা আইন করতে হবে। রাজাকারের সন্তানেরা যাতে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে এবং যেসব রাজাকাররা সরকারি চাকরিতে কর্মরত আছে তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
গণসমাবেশ অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, কেন্দ্রীয় কমিটির সমাজসেবা বিষয়ক সম্পাদক মারুফা আক্তার প্রমুখ।
সমাবেশে প্রদর্শন করা বিভিন্ন ফেস্টুনে লেখা ছিল- ‘মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে কটূক্তি চলবে না’, ‘মুক্তিযোদ্ধের চেতনা বৃথা যেতে দেবো না’, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের যারা কটূক্তি করেছে, তাদের বিচার করতে হবে’, এবং ‘মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অক্ষুণ্ন রাখতে হবে’ ইত্যাদি।