আইনজীবীদের সনদ প্রদান ও পেশাগত বিষয়ের সর্বোচ্চ সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচনী প্রচারণা জমে ওঠেছে। ভোট চাইতে সারাদেশ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীরা। তাই সপ্তাহের কর্মদিবসগুলোতে বিভিন্ন জেলার বার অ্যাসোসিয়েশনগুলোতে দৌঁড়াচ্ছেন তারা।
বরাবরের মতো এবারও প্রধানত আওয়ামী লীগপন্থী সাদা প্যানেল ও বিএনপিপন্থী নীল প্যানেলের মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। উভয় প্যানেলের প্রার্থীরা তাই এখন ভোট চাইতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আওয়ামীপন্থী প্যানেলে এবার সাধারণ ক্যাটাগরিতে সাতটি আসনে হেভিওয়েট প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এই প্যানেলে সাধারণ আসনে বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আব্দুল বাসেত মজুমদার, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুয়ায়ুন, অ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ. ম. রেজাউল করিম, বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম (জেড আই) খান পান্না, অ্যাডভোকেট পরিমল চন্দ্র গুহ এবং অ্যাডভোকেট মোখলেছুর রহমান বাদল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
এছাড়া গ্রুপ আসনে সাবেক বৃহত্তর ঢাকা জেলার সকল আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ -এ) অ্যাডভোকেট কাজী নজিবুল্লাহ হিরু, বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ বি) মো. কবির উদ্দিন ভূঁইয়া, বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ সি) ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ডি) এএফ. মো. রুহুল আনাম চৌধুরী, বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ই) পারভেজ আলম খান, বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ এফ) মো. ইয়াহিয়া এবং বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ এফ) রেজাউল করিম মন্টু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সারাদেশে নিজ নিজ দলের আইনজীবীদের পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন সিনিয়র আইনজীবীরা। নির্বাচন ঘিরে আইনজীবীদের মধ্যে একটি উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। ইতোমধ্যে সিলেট বিভাগ এবং চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চলের একাধিক জেলায় প্রচারণায় গিয়েছেন প্রার্থীরা। এছাড়া ঢাকা বার অ্যাসোসিয়েশনে পরিচিতি সভা হয়েছে। প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো জেলায় প্রচারণায় ব্যস্ত তারা। এখনও অনেকগুলো জেলা প্রচারণা বাকি থাকলেও নির্বাচনের আগেই সব জেলায় প্রচারণা শেষ করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।
আওয়ামীপন্থিরা বর্তমানে বার কাউন্সিলে সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই কর্তৃত্ব ধরে রাখতে বদ্ধ পরিকর সাদা প্যানেল সাধারণ আসনে অনেক যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রার্থীদের মনোনীত করেছেন। যাদের মধ্যে অনেকেই এর আগেও নির্বাচিত হয়েছেন। কয়েকজন বর্তমানেও বার কাউন্সিলের সদস্য। ফলে পূর্ণ প্যানেলের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আওয়ামীপন্থিরা।
বার কাউন্সিলের নেতৃত্ব পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপিপন্থী প্যানেলও এই নির্বাচনে জোর প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি সমর্থক নীল প্যানেলে সাধারণ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী, সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, আলহাজ্ব বোরহানউদ্দিন, হেলালউদ্দিন মোল্লা, মো. আব্বাস উদ্দিন ও আসিফা আশরাফী পাপিয়া।
এছাড়া গ্রুপ আসনে মনোনীতরা হলেন- ঢাকা অঞ্চল থেকে অ্যাডভোকেট মহসিন মিয়া, ময়মনসিংহ-ফরিদপুর অঞ্চল থেকে শ্রী জীবন কুমার গোস্বামী, সিলেট-কুমিল্লা অঞ্চল থেকে এ.টি.এম ফায়েজ, বগুড়া-রংপুর-দিনাজপুর-পাবনা অঞ্চল থেকে শেখ মুখলেসুর রহমান, যশোর-কুষ্টিয়া-রাজশাহী অঞ্চল থেকে মোঃ ইসহাক, খুলনা-বরিশাল-পটুয়াখালী অঞ্চল থেকে এম. আর. ফারুক এবং চট্টগ্রাম-নোয়াখালী অঞ্চল থেকে দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে এই প্যানেলের প্রচারণা পুরোপুরি শেষ হয়েছে। এছাড়া রাজশাহী ও খুলনা বিভাগেরও বেশিরভাগ জেলা আইনজীবী সমিতিতে গিয়েছেন প্রার্থীরা। নির্বানের আগে বাকি জায়গাগুলোতেও প্রচারণা চালাবেন বলে জানান তারা।
সাধারণত যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের বিপরীতে যারা থাকে তাদের পক্ষে প্রকাশ্যে অনেকে কাজ করতে চায় না। ফলে নীল প্যানেলের নীরব ভোট বেশি বলে দাবি প্রার্থীদের। একই সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল জয়ী হবেন বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
আগামী ১৪ মে হবে বার কাউন্সিল নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। এ দিন সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবন, দেশের জেলা সদরের সকল দেওয়ানি আদালত প্রাঙ্গণ এবং বাজিতপুরসহ দেশের ১২ উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি আদালত অঙ্গনে স্থাপিত কেন্দ্রে এই ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, প্রতি তিন বছর অন্তর বাংলাদেশ বার কাউন্সিল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একজন ভোটার মোট সাতটি ভোট দিতে পারেন। বার কাউন্সিল ১৫ জন সদস্যের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়। এর মধ্যে রাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বাকি ১৪ জন আইনজীবীদের সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হন।
১৪ জনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে একজন ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সারাদেশে সনদপ্রাপ্ত আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে সাতজন এবং দেশের সাতটি অঞ্চলের লোকাল আইনজীবী সমিতির সদস্যদের মধ্য থেকে একজন করে সাতজন নির্বাচিত হন।
সারা দেশের প্রায় ৫৭ হাজার আইনজীবী তিন বছরের জন্য এ নির্বাচনে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। নির্বাচন সংক্রান্ত আপত্তি শুনানির জন্য তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি ট্রাইব্যুনালও গঠন করে দেয়া হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হলেন- বিচারপতি সৈয়দ আমিরুল ইসলাম। বাকি দু’জন সদস্য হলেন-বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও অ্যাডভোকেট মো. ওজিউল্ল্যাহ।