স্বামীর দুর্নীতি ঠেকাতে স্ত্রীদের ৫ পরামর্শ দিলো দুদক

 

আইনের হাত থেকে রেহাই পেতে অবৈধ, বেআইনি সম্পদ স্ত্রীর নামে গড়েন স্বামীরা। এতে মামলা হলে ফেঁসে যান নির্দোষ স্ত্রীও। তাই স্বামীর অপকর্ম এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে রেহাই পেতে তাদের পাঁচ পরামর্শ দিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।

আজ রোববার (৬ মে) রাজধানীর ধানমণ্ডির একটি সেন্টারে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি পরামর্শগুলো দেন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দুর্নীতিগ্রস্তরা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে সম্পদ গড়েছেন স্ত্রী ও সন্তানদের নামে। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যখন স্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন-তখন দেখা যায় তিনি কিছুই জানেন না। কিন্তু ফেঁসে যান নির্দোষ স্ত্রীও। তাই স্ত্রীদের বেশকিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।

প্রথমত, স্বামী অর্থ কিভাবে উপার্জন করলেন তা জিজ্ঞেস করতে হবে; দ্বিতীয়ত, নিজেকে সচেতন হতে হবে; তৃতীয়ত, অনাহুত ভিকটিম হবেন না; চতুর্থত, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফরমে কিসের অ্যাকাউন্ট না জেনে স্বাক্ষর করবেন না এবং সর্বশেষ কোনো প্রকার অর্থ লেনদেন বা ব্ল্যাঙ্ক চেক বা চেকের পাতায় না জেনে স্বাক্ষর করবেন না।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, না জেনে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা চেক বইতে স্বাক্ষর করলে সেটা তো জঙ্গি বা সন্ত্রাসীদের অর্থ জোগানের জন্যও হতে পারে। এমন হলে এমনভাবে ফেঁসে যাবেন যে আর বের হতে পারবেন না।

তিনি বলেন, স্ত্রীর ভূমিকা বিশাল। একজন স্ত্রী যখন প্রশ্ন করেন, তা থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। কেননা, বিষয়টি লজ্জার। তাই স্ত্রীদের প্রশ্ন করতে হবে, স্বামী অর্থ কোথায় পেল। এই স্বাধীনতাটুকু নারীর থাকতে হবে। কেননা, যিনি কিছুই জানেন না, তিনি কিভাবে দুর্নীতির মামলায় আসামি হন!

অনেক আসামি জিজ্ঞাসাবাদের পর হাসিমুখে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন, তবে কি আগেই সব ঠিক করা হয়ে থাকে, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক প্রধান বলেন, আমাদের এখানে জিজ্ঞাসাবাদ অনেক কঠিন বিষয়। এখানে যখন সব কাগজপত্র নিয়ে বসা হয়, তারা অনেক কিছুই স্বীকার করেন। বাইরে গিয়ে হয়তো গণমাধ্যমের সামনে নাটক করেন। নিজের সামাজিক প্রভাব বজায় রাখতে হয়তো এটা করেন। অনেকেই তো আগের দিন হেসে হেসে দুদক থেকে বের হয়েছেন। আর পরেরদিন দেখা গেছে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়েছেন।

ঢাকা শহরে অনেক ফ্ল্যাটের মালিক নারী। তাদের অর্থের উৎস কি বা এটি তাদের স্বামীর অবৈধ অর্থে কেনা তা দুদক খতিয়ে দেখবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাজার হাজার ফ্ল্যাটের তথ্য সংগ্রহ করা খুব কঠিন বিষয়। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ থাকলে আমার তা খতিয়ে দেখতে পারি।

‘দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত আয় ও সম্পদের পারিবারিক দায়, নারীর ভূমিকা, ঝুঁকি ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, নারী নেত্রী খুশি কবীর, ফারাহ কবীর, টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান প্রমুখ।

আসিফ নজরুল বলেন, দুর্নীতি দমনে নারীর ভূমিকা অনেক। নারীর অনেক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ব্যক্তিত্ববান নারীর অবশ্যই তার স্বামীকে অর্থ উপার্জনের উৎসের কথা জিজ্ঞেস করতে হবে।

বক্তারা আরও বলেন, নারীরা সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় না থেকেও দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। অথচ তিনি জানতেই পারছেন না কিছু। এসব নিয়ে ব্যাপক সচেতনতা বাড়াতে হবে। কেননা, নারী চাইলেই দুর্নীতি প্রতিরোধ অনেকটাই করতে পারেন।