রমজানের পরে সরকার পতনে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এত দিন চেষ্টা করেছি। দেশের মানুষ এখন আর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখতে চায় না। মানুষ সরকার পরিবর্তন দেখতে চায়। আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের ভোটের অধিকার এবং ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনা হবে।’
আজ সোমবার (৭ মে) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সভাপতির কক্ষের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তার বিরুদ্ধে সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই অবস্থান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, সব তথ্য-উপাত্ত এবং খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিশ্লেষণ করে আগামীকাল (মঙ্গলবার, ৮ মে) আপিল বিভাগ হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বহাল রাখবেন এবং খালেদা জিয়া জামিনে মুক্ত হবেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের এই ক্রান্তিকালে আগামী দিনে যে আন্দোলন আসছে, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি-সম্পাদকসহ সব আইনজীবীদের নেতৃত্বে সেই আন্দোলন সফল হবে। গাজীপুর নির্বাচনে যে গণজোয়ার উঠেছিল, সেই গণজোয়ার দেখে সরকার পিছুটান দিয়েছে। সরকার এমন কৌশল নিয়েছে যে, নির্বাচনের আর পাঁচ থেকে সাতদিন বাকি। এ সময়ে এসে সরকার এটি করেছে। আমরা গাজীপুরে নির্বাচন যাতে হয়, তার জন্য আবেদন জানাবো।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা এত দিন চেষ্টা করেছি। দেশের মানুষ এখন আর আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দেখতে চায় না। সেজন্য রোজার পরে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে, এ সরকার পতনের জন্য। এই সরকারকে দেশের মানুষ দেখতে চায় না। সরকারের পরিবর্তন দেখতে চায়। দেশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক অধিকার, মানুষের ভোটের অধিকার এবং ন্যায়বিচার ফিরিয়ে আনার জন্য আমাদের এ আন্দোলন করতে হবে। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে আমরা এ আন্দোলন সফল করবো এবং আগামী নির্বাচনে গাজীপুরের মতো গণজোয়ার সারা বাংলাদেশে দেখবেন। সেই গণজোয়ারে আওয়ামী লীগ ও তাদের প্রার্থীরা মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেন না। বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়া সুস্থ অবস্থায় জেলে গেছেন। আর এখন জেলে থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন। হাইকোর্ট জামিন দেওয়ার পর আপিল বিভাগ স্থগিত করায়, তিনি মুক্ত হতে না পেরে আজ কারাগারে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মঙ্গলবার (৮ মে) তার জামিন আবেদনের শুনানির তারিখ রয়েছে। আমরা আশা করবো, আদালত ন্যায়বিচার করবেন এবং যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে তাকে জামিন দেবেন।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিদায়ের পর আদালত স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে না। আমি আশা করবো, আদালত সাহসের সঙ্গে জামিন দিয়ে প্রমাণ করবেন যে, বিচার বিভাগ স্বাধীন। আমি আশা করবো, সর্বোচ্চ আদালত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার দায়িত্ব পালন করবেন।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘সরকারের পক্ষে রায় না দেওয়ার কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহাকে চেয়ারে বসতে দেওয়া হয়নি। বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আমরা মনে করি, বিচার বিভাগকে স্বাধীন থাকতে হবে, সংবিধান সমুন্নত রাখতে হবে। আমরা ন্যায়বিচার চাই। ন্যায়বিচার হলে নিম্ন আদালতে খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর সাজা হতো না। আপিল বিভাগেও জামিন স্থগিত হতো না।’
অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, ‘আমাদের দাবি একটাই— প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদায় নিতে হবে। এজন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে হবে না। লাঠি ও ঝাড়ু মিছিল করতে হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে হবে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীনের সভাপতিত্বে এসময় আরও বক্তব্য রাখেন— সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট গরীব-এ-নেওয়াজ, মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন, সমিতির সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, ড. গোলাম রহমান, ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, আবেদ রাজা, মনির হোসেন, শেখ অহিদুজ্জামান প্রমুখ।