বাংলাদেশে প্রতি বছর গড়ে ৩ কোটি মানুষ আইনগত সমস্যার সম্মুখীন হন এবং প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিরোধই এর প্রধান কারণ বলে এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার মিলনায়তনে ‘জাস্টিস নিডস অ্যান্ড স্যাটিসফেকশন ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য উঠে আসে বলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আইনগত সমস্যাগুলোর মধ্যে জটিল সমস্যাগুলো হয় ভূমি সংক্রান্ত বিষয়ে।
২০১৭ সালের আগস্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে সাক্ষাৎকারে ভিত্তিতে এই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়। নেদারল্যান্ডসের অলাভজনক প্রতিষ্ঠান দ্য হেগ ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেশন অব ল (হিল)-এর পরিচালনায় ও নেদারল্যান্ডস সরকার ও ব্র্যাকের সহযোগিতায় এই গবেষণা সারা দেশ থেকে ৬ হাজার উত্তরদাতা অংশ নেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে ৪০ শতাংশ, জমির বিরোধে ২৯ শতাংশ, অপরাধে ২১ শতাংশ, পারিবারিক বিষয়ে ১২ শতাংশ, অর্থ সংক্রান্ত বিষয়ে ১২ শতাংশ, সমাজকল্যাণ সংক্রান্ত ১১ শতাংশ, ভোক্তা সংক্রান্ত সমস্যায় ৯ শতাংশ এবং দুর্ঘটনা ও আঘাতজনিত বিষয়ে ৮ শতাংশ মানুষ আইনগত সমস্যায় পড়েন।
গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল দেখে অনানুষ্ঠানিক বিচার ও দ্বন্দ্ব নিরসন প্রক্রিয়া ও সালিশি ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করে তোলার উপর জোর দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য অধিকাংশ সময় এসব অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতিরই আশ্রয় নিয়ে থাকেন। তাই অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া সালিশের মাধ্যমে দ্বন্দ্ব নিরসনের জন্য নির্দিষ্ট নির্দেশিকা বা নীতিমালা থাকা জরুরি। এতে করে শালিশ প্রক্রিয়া আরও বেশি কার্যকর হবে।”
দরিদ্র মানুষ যাতে প্রয়োজনে আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থার আশ্রয় নিতে পারেন সে লক্ষ্যে বিচার ব্যবস্থার প্রয়োজনীয় সংস্কার করাও জরুরি বলে মনে করে তিনি।
ব্র্যাক মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচির প্রধান সৈয়দা সাজেদা ফারিসা কবির বলেন, “আইন ও বিধিমালা আরও সহজ ভাষায় ব্যাখ্যা করে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে, যাতে তারা আরও ভালোভাবে আইনের সুরক্ষা নিতে পারেন। শুধু আইন বিষয়ে সচেতনতা বাড়ালেই চলবে না বরং অনানুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করতে হবে।”
অনুষ্ঠানে সবার জন্য কার্যকর আইনগত সহায়তাপ্রাপ্তি সহজ করতে বেশ কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- আইনগত সমস্যার শ্রেণিকরণ করে অগ্রাধিকারভিত্তিতে সেগুলোর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনগত অধিকার সম্পর্কে সহজ ভাষায় প্রয়োজনীয় তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো, আনুষ্ঠানিক বিচার ব্যবস্থা এবং অনানুষ্ঠানিক বিচার ও সালিশি প্রক্রিয়ার কার্যকর সমন্বয় ঘটানো, কার্যকর ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবনকে ব্যবহার করা।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে নেদারল্যান্ডের দ্য হেগ ইনস্টিটিউট ফর ইনোভেশন অব ল (হিল) এর হেড অফ মেজারিং জাস্টিস ড. মার্টিন গ্রামাটিকভ, একই সংস্থার কোয়ান্টিটেটিভ জাস্টিস ডাটা অ্যানালিস্ট মার্টিন কাইন্ড বক্তব্য দেন। বিডিনিউজ