প্রতীকী ছবি

বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা

 

হাইকোর্টের এক বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর তার পারিবারিক সম্পত্তি আত্মসাতের চেষ্টা করা হয়েছিল চট্টগ্রামে। ভুয়া এ প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছিল, আদালতে বিবাদীকে হাজির হওয়ার নোটিশ জারি করা হয়েছে। ৩৬ বছর আগে বিচারপতির মা মারা গেলেও এ প্রতিবেদনে তাকে জীবিত দেখানো হয়েছিল। প্রতিবেদন জমা দিয়ে ভূমিদস্যু চক্রটি চট্টগ্রাম আদালত থেকে একতরফা রায়ও পেয়েছিল।

প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দিয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জারিকারক সনজয় মজুমদার। তবে বিচারপতির স্বাক্ষর জাল করার বিষয়টি প্রমাণ হওয়ায় ফেঁসে গেছেন তিনি। ফৌজদারি মামলার আসামি হয়েছেন তিনি ছাড়াও ভূমি আত্মসাতের চেষ্টাকারী স্বপন দাশগুপ্ত। বর্তমানে তারা পালিয়ে আছেন।

হাইকোর্টের নির্দেশে চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির মো. এজেডএম রেজাউল করিম বাদী হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে মামলা (সিআর নম্বর ৮৭৩/১৮) করেন। গত ৮ মে মামলা করার পর শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত দুই আসামি সনজয় মজুমদার ও স্বপন দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলায় দুই আসামির বিরুদ্ধে প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি, আদালতের নথিপত্র ও সরকারি রেজিস্টার জাল করা ও কোনো জাল দলিলকে খাঁটি হিসেবে ব্যবহার করার অপরাধে দণ্ডবিধির পাঁচটি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

মামলার বাদী চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নাজির এজেডএম রেজাউল করিম গণমাধ্যমকে বলেন, হাইকোর্টের বিচারপতি মাহমুদুল হকের স্বাক্ষর জাল করে ভুয়া নোটিশ জারি করার ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজের নির্দেশে চট্টগ্রাম সিএমএম আদালতে মামলা করেছি। আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা ইস্যু হয়েছে।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে চট্টগ্রাম প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে নগরীর চকবাজার থানার দেব পাহাড় এলাকার বিচারপতি মাহমুদুল হকের পারিবারিক সম্পত্তি নিজের দাবি করে একটি মামলা করেন স্বপন দাশগুপ্ত। আরেকটি মামলায় (৯০/২০১১) বিবাদী করা হয় এই বিচারপতির মা জাকিয়া খাতুনকে। যদিও এর সাড়ে তিন দশক আগে ১৯৮৬ সালের ২৪ জানুয়ারিতেই তার মৃত্যু ঘটে। চট্টগ্রাম প্রথম সিনিয়র সহকারী জজ আদালত শুনানির পর মামলার বিবাদী জাকিয়া খাতুনকে আদালতে হাজির হতে নোটিশ জারির নির্দেশ দেন।

চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জারিকারক সনজয় মজুমদার ২০১২ সালের ৬ মার্চ জাকিয়া খাতুনের নগরীর দেব পাহাড়ের বাসায় হাজির হয়ে নোটিশ জারি করা হয়েছে জানিয়ে আদালতে প্রতিবেদন দেন। আদালতের নোটিশ তামিল করা-সংক্রান্ত এ প্রতিবেদনে তিনি জানান, বিবাদী জাকিয়া খাতুন বাসায় থাকলেও পর্দানশিন হওয়ায় সাক্ষাৎ পাওয়া গেল না। তবে কার্যকারক হিসেবে বাসায় উপস্থিত তার ছেলে মাহমুদুল হক স্বাক্ষর করে নোটিশটি গ্রহণ করেছেন।

এ ভুয়া প্রতিবেদনের আলোকে নিম্ন আদালতে ২০১২ সালের ২৩ মে একতরফা রায় হয়। ২০১২ সালের ২ ডিসেম্বর উচ্চ আদালতে আপিল করেন জাকিয়ার ওয়ারিশরা। হাইকোর্টের রায় তাদের পক্ষে গেলে স্বপন দাশগুপ্ত সুপ্রিম কোর্টে লিভ টু আপিল করেন। তবে তা খারিজ হয়ে যায়। এ রায়ের কপি চট্টগ্রাম আদালতে আসে গত ২৩ এপ্রিল।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী গত ৮ মে এক অফিস আদেশ জারি করে ভুয়া নোটিশ জারি এবং বিচারপতির স্বাক্ষর জাল-জালিয়াতি করার অপরাধে আদালতের জারিকারক সনজয় মজুমদার ও স্বপন দাশগুপ্তের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। সমকাল