আদালতে আইনজীবীদের কর্মবিরতি, ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি করেছে ভারত। বর্তমানে সেই বিধি হাইকোর্টের বিচারপতিদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার
ষোলো বছর আগে আদালতে কর্মবিরতি নিষিদ্ধ করতে উদ্যোগী হয়েছিল ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট। ২০০২ সালে সর্বোচ্চ আদালত দেশের সব হাইকোর্টকে নির্দেশ দিয়েছিল, আইনজীবীদের কর্মবিরতি, ধর্মঘট নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য অবিলম্বে প্রয়োজনীয় বিধি তৈরি করতে হবে। কোন হাইকোর্টে বিধি প্রণয়নের কাজ কতটা এগোল, সেই বিষয়ে এত দিন আর বিশেষ উচ্চবাচ্য হয়নি। কিন্তু হাইকোর্ট থেকে নিম্ন আদালত কর্মবিরতি হয়েই চলেছে।
এত দিন পরে কলকাতা হাইকোর্ট প্রশাসন গতকাল মঙ্গলবার (১৫ মে) প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে জানাল, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তারা কর্মবিরতি নিষিদ্ধ করার বিধি তৈরি করেছে।
প্রশ্ন উঠছে, এ বার কি তা হলে কৌঁসুলিদের হুটহাট কর্মবিরতির প্রবণতা বন্ধ হবে? পর্যাপ্ত বিচারপতি নিয়োগের দাবিতে সম্প্রতি দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে হাইকোর্টে কাজ বন্ধ রেখেছিলেন আইনজীবীরা। সব আসন পূরণ না-হলেও সুপ্রিম কোর্টে থেকে কেন্দ্রীয় সরকার বিচারপতির কয়েকটি পদে নিয়োগের ব্যাপারে তৎপর হওয়া সত্ত্বেও কৌঁসুলিরা কাজে ফিরতে অস্বীকার করেন। হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির আবেদন-নিবেদনেও কাজ হচ্ছিল না। মামলার পাহাড় জমতে থাকে। বিচারপ্রার্থীরা নাজেহাল হয়ে যান। অবশেষে কয়েক জন বিচারপতি নিয়োগের পরে, এপ্রিলের শেষ দিনে সেই কর্মবিরতি তুলে নেওয়া হয়েছে।
এই অবস্থায় প্রশ্ন জোরদার হয়েছে, শীর্ষ আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তৈরি বিধি মেনে চিরতরে কৌঁসুলিদের কর্মবিরতিতে ইতি টানার কাজটা কে কবে কী ভাবে করবে? আইন শিবিরে এর সদুত্তর মিলছে না।
হাইকোর্ট সূত্রের খবর, সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ মেনে আইনজীবীদের ধর্মঘট ও কর্মবিরতি নিষিদ্ধ করার আবেদন জানিয়ে অক্ষয়কুমার সারেঙ্গি নামে এক ব্যক্তির জন্য প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে ২০১৫ সালে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন। তার আগে ওই ব্যক্তি তথ্য জানার আইন অনুযায়ী হাইকোর্ট প্রশাসনের কাছে জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে কলকাতা হাইকোর্ট বিধি তৈরি করেছে কি না।
অক্ষয়বাবুর আইনজীবী শ্রীকান্ত দত্ত জানান, সেই সময় হাইকোর্ট প্রশাসন জানিয়েছিল, বিধি তখনও তৈরি হয়নি।
হাইকোর্ট প্রশাসনের আইনজীবী সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার ডিভিশন বেঞ্চে জানান, বিধি তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। সেই বিধি হাইকোর্টের বিচারপতিদের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তা শুনে ডিভিশন বেঞ্চ মামলার নিষ্পত্তি করে দেয়।
অক্ষয়বাবুর মামলার ফয়সালা হলেও বিচারপ্রার্থীদের অপেক্ষা সাঙ্গ হচ্ছে না। তাঁদের বক্তব্য, বিধি তো হল। কার্যক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে কবে? আইনজীবীদের কর্মবিরতি কবে নিষিদ্ধ হবে, সেই দিকেই তাকিয়ে তাঁরা।