নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার ১২ দিন পর সারাদেশের আইনজীবীদের নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। ঘোষিত ফল অনুসারে নির্বাচনে ভরাডুবি হয়েছে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীদের নীল প্যানেলের। সংখ্যাগরিষ্ঠতা রেখে টানা দ্বিতীয়বারের মতো বার কাউন্সিলের কর্তৃত্ব থাকছে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের আইনজীবীদের হাতে।
বার কাউন্সিল ভবনে শনিবার (২৬ মে) সারা দিনের গণনা শেষে রাতে ফলাফল ঘোষণা করেন বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
নির্বাচনে ১৪টি আসনের মধ্যে ১২টি আসনে জয়ী হয়েছে সরকার সমর্থকদের সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ। অপরদিকে বিএনপি জোটের জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল পেয়েছে মাত্র দু’টি আসন।
গত ১৪ মে দেশব্যাপী অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনের পর সারাদেশ থেকে সব রেজাল্ট শিট আসার পর বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আনুষ্ঠানিকভাবে এ ফলাফল ঘোষণা করেন।
সরকার সমর্থকরা গ্রুপ আসনের বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতি (গ্রুপ সি) এবং সাধারণ আসনের সাতটির মধ্যে একটি ছাড়া বাকি সব আসনে জিতেছেন।
নির্বাচনে সাধারণ আসনে বিজয়ীরা হলেন, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বর্তমান বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার (ভোট সংখ্যা-১৬৩০৬), আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম (১৪৬৬৪), জেড আই খান পান্না (১৪৪৯৭), ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান(১৪১৮৪), আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর অপর সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন (১৪০৯৮), বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এ জে মোহাম্মদ আলী (১৩৭১২) এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোহাম্মদ মোখলেছুর রহমান বাদল (১৩২৮৮)।
অন্যদিকে গ্রুপ আসনে সরকার সমর্থকদের মধ্যে থেকে নির্বাচিতরা হলেন- ঢাকা জেলার (গ্রুপ-এ) কাজী নজিবুল্লাহ হিরু(৫১৫৭), বৃহত্তর ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ বি) মো. কবীর উদ্দিন ভূঁইয়া(১৫৬৫), বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা ও সিলেট জেলা অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ডি) এ.এফ মো. রুহুল আনাম চৌধুরী (১৬১৬), বৃহত্তর খুলনা, বরিশাল ও পটুয়াখালী অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ ই) পারভেজ আলম খান (১৮৫৮), বৃহত্তর রাজশাহী, যশোর ও কুষ্টিয়া অঞ্চলের আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ এফ) মো. ইয়াহিয়া (১৪৬৭) এবং বৃহত্তর দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ এফ) রেজাউল করিম মন্টু (১৪৬৩)।
অপরদিকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার আইনজীবী সমিতিতে (গ্রুপ সি) জিতেছেন বিএনপি সমর্থক মো. দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী(১৯৩০)।
বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনার্স অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার ১৯৭২ অনুসারে প্রতি তিন বছরে একবার বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন হয়। বার কাউন্সিল মূলত ১৫ সদস্যের কমিটির দিয়ে পরিচালিত হয়। নির্বাচনের মাধ্যমে ১৪ জন সদস্য নির্বাচিত হয়ে বার কাউন্সিল পরিচালনার দায়িত্ব পান। ১৪টি পদের মধ্যে আইনজীবীদের ভোটে সাধারণ আসনে ৭ জন এবং আঞ্চলিকভাবে (গ্রুপ আসনে) ৭ জন আইনজীবী বার কাউন্সিল পরিচালনার জন্য সদস্য নির্বাচিত হন।
রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনি কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল পদাধিকার বলে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৪টি পদের মধ্যে সরকার সমর্থকরা জয় পান ১১টি পদে। বাকি ৩ পদে জয় পেয়েছিলেন বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থক প্রার্থীরা।