পিরোজপুরের সার্জিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ‘দখলদারদের’ বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বিবাদীদের ব্যর্থতায় রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। রুলে পিরোজপুরের সার্জিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক বিজয় কৃষ্ণ হালদারের জমি দখলের ক্ষেত্রে দায়ীদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণে বিবাদীদের ব্যর্থতা কেন আইনগত কর্তৃত্ব বর্তিভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়েছেন আদালত।
একইসঙ্গে বিজয় কৃষ্ণ হালদার ও তার স্ত্রী-কন্যার নিরাপত্তা ও চলাচল নিশ্চিত করতে এবং সার্জিকেয়ার ক্লিনিকের বাড়ি রক্ষায় বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৯ মে) বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের বেঞ্চ এ রুল জারি করেন।
দুই সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, পিরোজপুর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, পিরোজপুর পৌরসভার মেয়র, পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি), বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সদরের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং পিরোজপুর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ওবায়দুল হক ওরফে পিন্টুকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। আদেশের পরে মনজিল মোরসেদ দুই সপ্তাহের রুল জারির বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
২৭ মে একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকা ‘পিরোজপুরে বাড়ি দখল করতে যুবলীগ নেতার অবিশ্বাস্য কাণ্ড’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে ২৮ মে হাইকোর্টে মানবাধিকার ও পরিবেশবাদী সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট করা হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, “বাসাটিতে গ্যাস নেই। বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগও বিচ্ছিন্ন। এ অবস্থায় নয় মাস ধরে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন পিরোজপুর সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজের সাবেক উপাধ্যক্ষ গীতা রানী মজুমদার ও তাঁর স্নাতকপড়ুয়া একমাত্র মেয়ে। গীতা রানীর বাসার বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ কোনো কর্তৃপক্ষ বিচ্ছিন্ন করেনি। পরিবারটিকে বের করে দিয়ে বাড়িটি দখল করতে পিরোজপুর জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক ওরফে পিন্টু এই কাজ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
পিরোজপুর শহরের বাইপাস সড়কের মাছিমপুর এলাকায় সার্জিকেয়ার ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পঞ্চম তলায় থাকেন গীতা রানীর পরিবার। তাঁর স্বামী চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা। এর অর্ধেক মালিকানা বিক্রি করা হয় যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকের কাছে। সেই সূত্রে তিনি বাড়িটির অর্ধেকের মালিক হন। কিন্তু তিনি ক্লিনিকের ব্যবসা করায়ত্ত করার পর এখন পুরো বাড়িটিও দখল করতে চান বলে বিজয় কৃষ্ণের পরিবারের অভিযোগ।
গীতা রানী জানান, গত বছরের আগস্টে তাঁদের বাসার পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে। রান্নার জন্য গ্যাসের সিলিন্ডার আনতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। কারা এটা করছে—জানতে চাইলে গীতা রানী বলেন, বাড়ি ও ক্লিনিকটি পুরোপুরি দখল করে রেখেছেন ওবায়দুল হক। তিনিই পানি ও বিদ্যুৎ-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন। বাসায় আসা-যাওয়া করতে বাধা দিচ্ছেন, ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন।
গীতা রানীর বাসার একটি কক্ষে আলমারি, ওয়ার্ডরোবের তালা ভাঙা। ঘরে কেরোসিনের একটি চুলা। গীতা রানী বলেন, প্রায় দিনই হোটেল থেকে খাবার কিনে আনিয়ে খেতে হয়। অন্য বাসায় গিয়ে গোসল করতে হয়। সব সময় আতঙ্কে থাকি। এভাবে কত দিন বেঁচে থাকতে পারব জানি না। বিষয়টি স্থানীয় সাংসদ, মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ দায়িত্বশীল সবাই জানেন। কিন্তু কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
চিকিৎসক বিজয় কৃষ্ণ হালদার তাঁর ক্লিনিকের অর্ধেক শেয়ার ওবায়দুল হকের কাছে বিক্রি করেন। এর পরপরই ২০১৫ সালের অক্টোবরে রহস্যজনকভাবে অপহৃত হন বিজয় কৃষ্ণ। আহত অবস্থায় তাঁকে পাওয়া যায় ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। এরপর তিনি মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্থ হয়ে পড়েন এবং তাঁকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যেই ক্লিনিকসহ পুরো বাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেন ওবায়দুল হক। শুধু পঞ্চম তলায় বিজয় কৃষ্ণের পরিবার থাকে। গীতা রানী বলেন, এখন তাঁদের উচ্ছেদের জন্য অমানবিক পন্থা বেছে নিয়েছেন ওবায়দুল হক।
যুবলীগের নেতা ওবায়দুল হকরা তিন ভাই। বড় ভাই পুলিশ পরিদর্শক। ছোট ভাই অভিনেতা এবং চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির একজন নেতা।”