মাদকবিরোধী অভিযান

পাঁচ জেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ ৭ মাদক ব্যবসায়ী নিহত

দেশজুড়ে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) ও পুলিশের চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে সোমবার দিবাগত রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় ঠাকুরগাঁও, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও যশোরে আরও সাতজন নিহত হয়েছেন।

পুলিশের ভাষ্য, এর মধ্যে যশোরে ‘গোলাগুলি’তে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সহযোগীদের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ একজন নিহত হন। ঠাকুরগাঁওয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন নিহত হয়েছেন। সাতক্ষীরার কলারোয়া থেকে একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত সবার পাশ থেকে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য উদ্ধারের কথা বলেছে পুলিশ।

ঠাকুরগাঁও
পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ হারুন (৪৫) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার পাঁচঘড়িয়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, নিহত হারুনের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার শীতলপুর গ্রামে। তিনি মৃত আবদুল আজিজের ছেলে।

পুলিশের দাবি, গোপন খবর পেয়ে সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার পাঁচঘড়িয়া এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযানে যায় পুলিশ। এ সময় মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। গোলাগুলির একপর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ হারুনকে ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ১১০ বোতল ফেনসিডিল, চারটি কার্তুজের খোসা ও চারটি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে। এ ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্যের আহত হওয়ার দাবি করেছে পুলিশ।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আরএমও সুব্রত কুমার সেন জানান, রাত সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে হাসপাতালে নিয়ে আসে। হাসপাতালে আনার আগেই ওই ব্যক্তি মারা গিয়েছিলেন।

হরিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুহুল কুদ্দুস জানান, হারুন এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ছিলেন। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে সাতটি মামলা রয়েছে।

সাতক্ষীরা
কলারোয়া উপজেলার চিতলা এলাকা থেকে পুলিশ আনিসুর রহমান (৪২) নামের একজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে। রাত আড়াইটার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১টি ওয়ান শুটার গান, ২টি গুলি ও ৭০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। আনিসুর উপজেলার দেয়াড়া ইউপির পাকুড়িয়া গ্রামের সুরত আলীর ছেলে।

কলারোয়া থানার ওসি বিপ্লব কুমার নাথের ভাষ্য, কুশলিয়া ইউনিয়নের চিতলে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে—এমন তথ্যের ভিত্তিতে উপপরিদর্শক (এসআই) সিরাজুল মাহমুদের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। সেখানে গিয়ে পুলিশ ৩টি ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এতে বিরোধকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়। পরে ঘটনাস্থলে একজন গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। তাঁকে দ্রুত কলারোয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর মাথায় গুলির চিহ্ন রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে ১টি ওয়ান শুটার গান, ২টি গুলি ও ৭০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।

ওসি জানান, আনিসুর একজন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাঁর নামে কলারোয়া থানায় ১০টি মামলা রয়েছে।

যশোর
রাত তিনটার দিকে যশোর শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে ‘গোলাগুলি’তে দুই মাদক ব্যবসায়ী নিহত হন। তাঁরা হলেন যশোর সদর উপজেলার মণ্ডলগাতী গ্রামের জাহান আলীর ছেলে আছর আলী (৫৬) ও শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া এলাকার সেকেন্দার আলীর ছেলে মানিক (২৬)।

যশোর কোতোয়ালি থানার এসআই মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, শহরের চাঁচড়া রায়পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি হচ্ছে বলে খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে হাজির হয়। এ সময় মাদকদ্রব্য বিক্রেতারা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থল তল্লাশি করে ২টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থল থেকে ২টি পিস্তল, ২টি গুলি, ৫টি গুলির খোসা ও ৬০০টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়।

কুষ্টিয়া
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের শেহালা মাঠে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুই মাদক ব্যবসায়ী মুকাদ্দেস আলী (৪২) ও ফজলুর রহমান ওরফে টাইটেল (৪৮) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ৩ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অস্ত্র, গুলি ও বিপুল পরিমাণ মাদক উদ্ধার করেছে।

দৌলতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজগর আলী জানান, একদল মাদক ব্যবসায়ী দৌলতপুর উপজেলার বোয়ালিয়া ইউনিয়নের শেহালা মাঠে মাদক ক্রয়-বিক্রয় করছে—এমন গোপন সংবাদ পেয়ে দৌলতপুর থানা-পুলিশের টহল দল মঙ্গলবার রাত ৩টার দিকে ঘটনাস্থলে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েন। জবাবে পুলিশও পাল্টা গুলি চালালে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ দুজন মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁদের উদ্ধার করে দৌলতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক গুলিবিদ্ধ দুজনকে মৃত ঘোষণা করেন।

আজগর আলী জানান, নিহত প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা ও ছিনতাইয়ের অন্তত ৮টি করে মামলা রয়েছে। মুকাদ্দেস উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তসংলগ্ন মুন্সিগঞ্জ গ্রামের রেজাউল ইসলামের ছেলে এবং ফজলুর প্রাগপুর বাজারের মৃত ইয়াকুব আলীর ছেলে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ জনি মিয়া নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। সোমবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে পৌর এলাকার খালাজোড়ার আনোয়ারপুর রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ভাষ্য, নিহত ব্যক্তি মাদক কারবারি, চোরাচালানি ও ডাকাত ছিলেন। সহযোগীদের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে তিনি নিহত হন। জনির বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে।

নিহত জনি (৩০) আখাউড়া রেলওয়ে কলোনির পূর্ব পাশের বাগানবাড়ি এলাকার ফিরোজ মিয়ার ছেলে। নিহত জনি কুমিল্লার দেবিদ্বার থানার খাইয়ার গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তাঁর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জেলা সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দিনগত রাত আড়াইটার দিকে আখাউড়া পৌরসভার খালাজোড়া নামক স্থানে গোলাগুলির শব্দ শুনে উপপরিদর্শক (এসআই) কামাল হোসেন ও হাদিস উদ্দিন পুলিশ সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। জনিকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনাস্থল থেকে ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি কার্তুজ, ২টি বড় ছোরা, ১টি চাপাতি উদ্ধার করা হয়।

মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর ১৫ দিনে বন্দুকযুদ্ধে নিহত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়াল ১০৭। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মাদক ব্যবসায়ী।

গতকাল রাতের বন্দুকযুদ্ধের পর দু-একটি ছাড়া প্রতিটি ঘটনাস্থল থেকেই ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য, দেশি-বিদেশি অস্ত্র উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যত দিন না মাদকের ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আসবে, তত দিন পর্যন্ত এ অভিযান চলবে। এটি নিয়মিত অভিযান। মাদক নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এই ‘যুদ্ধ’ অব্যাহত থাকবে।