বন্দুকযুদ্ধ

মাদকবিরোধী অভিযান: ঢাকাসহ সারাদেশে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ১৩

চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধ ও গোলাগুলিতে মঙ্গলবার (২৯ মে) রাতে রাজধানীসহ সারাদেশে ১৩ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৩, মাগুরায় ৩ এবং বোনাপোলে ২ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া কুমিল্লা, সিরাজগঞ্জ, নড়াইল, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একজন করে মারা গেছে। নিহতরা সবাই মাদক ব্যবসায়ী বা মদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা
রাজধানীর ভাষানটেকে দেওয়ানপাড়া লোহার ব্রিজের কাছে র‌্যাবের সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের বন্দুকযুদ্ধে ৩ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির এই তথ্য জানিয়েছেন।

নিহতরা হলো, বাপ্পি (৩৮), আতাউর রহমান আতা (৪০) ও মোস্তফা হাওলাদার (৪৫)। এদের মধ্যে আতা সাভারের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বলে জানায় র‌্যাব।

অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য, অস্ত্র ও গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

র‌্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি কসাই মোস্তফার নামে ৭-৮টি মামলা রয়েছে। বাপ্পির নামে হত্যা মামলাসহ মাদকের মামলা রয়েছে। সে প্রতিদিন ‘শখানেক ইয়াবা বিক্রি করতো। তবে নিহতদের বিষয়ে সার্বিক তথ্য খুঁজে বের করতে আমরা কাজ করছি।’

বেনাপোল
যশোরের বেনাপোল পোর্ট থানার বড়আঁচড়া গ্রাম থেকে দুই জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলিতে তারা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ দাবি।

বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি অপূর্ব হাসান জানান, নিহতদের মধ্যে একজন বেনাপোলের ভবেরবেড় গ্রামের লিটন হোসেন। তার বিরুদ্ধে ১০টি মামলা রয়েছে। অপরজনের পরিচয় জানা যায়নি।

ওসি অপূর্ব হাসান বলেন, ‘মঙ্গলবার রাত আড়াইটার দিকে বেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ জানতে পারে— বড়আঁচড়া গ্রামে দুই দল মাদক ব্যবসায়ীর মধ্যে গোলাগুলি চলছে। পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে পৌঁছালে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে যায়। এসময় ঘটনাস্থল থেকে দুই জনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এছাড়া ১০ কেজি গাঁজা, একটি অস্ত্র, দুই রাউন্ড গুলি ও দুই রাউন্ড গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়।’

মাগুরা
মাগুরায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ৩ মাদক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার গভীর রাতে সদর উপজেলার বাটিকাডাঙ্গা মাঠ থেকে এসব মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ ৩২০ গ্রাম হেরোইন, ১ কেজি গাঁজা ও ৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করেছে।

নিহতরা হলো, রায়হান মিয়া ওরফে ব্রিটিশ, বাচ্চু চোপদার ও কিশোর অধিকারী কালা। এদের বিরুদ্ধে সদর থানাসহ আশপাশের থানায় কয়েক ডজন মাদকের মামলা রয়েছে।

পুলিশ জানায়, বাটিকাডাঙ্গা মাঠের মধ্যে দু’দল মাদক ব্যবসায়ী টাকা ভাগাভাগি নিয়ে গোলাগুলি করছে এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশের টহল দল সেখানে যায়। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তিনজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় দেখতে পেয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। পরে এলাকাবাসী তাদের পরিচয় নিশ্চিত করে।

নড়াইল
নড়াইল সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে সজীব শেখ (৩২) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ২টার দিকে নড়াইল-লোহাগড়া সড়কের সদর উপজেলার মালিবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনায় পাঁচ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

তিনি জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ জানতে পারে মাদক কারবারিরা নড়াইলের মালিবাগ মোড় এলাকায় অবস্থান করছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ মঙ্গলবার রাতে সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে মাদক কারবারিরা পুলিশের ওপর আক্রমণ চালায়। পুলিশও পাল্টা আক্রমণ চালায়। একপর্যায়ে সজীব গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন এবং তার অন্য সঙ্গীরা পালিয়ে যান। পরে সজীবকে উদ্ধার করে নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি রিভলবার ও দুই রাউন্ড গুলি, দু’টি রামদা, একটি গাছিদা এবং ২১৩ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচংয়ে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রোছমত আলী (৪০) নামের এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত পৌনে ১টার দিকে লড়িবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বুড়িচং থানার ওসি মনোজ কুমার দে একথা জানিয়েছেন।

ওসি জানান, রোছমত আলী তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তার বিরুদ্ধে থানায় ৭টি মাদকের মামলা রয়েছে।

তিনি জানান, গোপন খবরের ভিত্তিতে মাদক উদ্ধার করতে লড়িবাগ এলাকায় রাস্তার পাশে তিনি পুলিশ নিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে মাদক ব্যবসায়ী রোছমত ও তাদের সহযোগীদের আটকের চেষ্টাকালে তারা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় পুলিশও আত্মরক্ষার্থে গুলি চালায়। এতে রোছমত গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযানের সময় থানার তিন পুলিশ আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ১ রাউন্ড কার্তুজসহ একটি পাইপগান ও ৪০ কেজি গাঁজা উদ্ধার করেছে। এছাড়া কুমিল্লা সদরের পালপাড়া ব্রিজের সামনে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে শাহ আলম নামে এক মাদক ব্যবসায়ী গুলিবিদ্ধ হয়েছে।

সিরাজগঞ্জ
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ আহসান হাবিব (৪৫) নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। এ সময় একটি ওয়ান শ্যুটার গান, এক হাজার পিস ইয়াবা ও ২০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে।

বুধবার ভোরে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের ঝাঐল ওভার ব্রিজের পাশে এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে। নিহত আহসান হাবিব কামারখন্দ উপজেলার কামারখন্দ হাটপাড়া গ্রামের ইজার উদ্দিনের ছেলে।

র‌্যাব-১২ সিরাজগঞ্জ ক্যাম্পের কমান্ডার মো. সাকিবুল ইসলাম খান এ তথ্য জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম নগরীর পলোগ্রাউন্ড এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে মো. ইসহাক নামে এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। র‌্যাব-৭ এর উপপরিচালক আশেকুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

নিহত ইসহাকের নামে নগরীর বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, খুনসহ মোট ১৯টি মামলা রয়েছে বলে তিনি জানান। ঘটনাস্থল থেকে চার হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটারগান ও ১০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে।

এ নিয়ে গত ১২ দিনে চট্টগ্রামে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ চট্টগ্রাম নগরীতে চার জন নিহত হয়েছেন।

কক্সবাজার
কক্সবাজারে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নেত্রকোনার এক মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছে। তার নাম মজিবুর রহমান (৪২)। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে কক্সবাজার শহরের মাদ্রাসা সড়কের সমুদ্র সৈকতের কবিতাচত্বর এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। র‌্যাব-৭ এর কোম্পানি কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, মজিবুর রহমান শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী। তিনি ১০টি মামলার আসামি। ঘটনাস্থল থেকে ছয় হাজার পিস ইয়াবা, একটি ওয়ান শুটার গান, তিন রাউন্ড গুলি ও দুইটি খালি খোসা উদ্ধার করা হয়েছে।