চট্টগ্রামের হালিশহর থেকে ৪৫ কোটি টাকার ১৩ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন দুই সহোদর আশরাফ আলী ও মো. হাসান। ৪ মে গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন তারা। ৮ মে জামিন চেয়ে তারা চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করেন। জামিন নামঞ্জুর হওয়ায় জজকোর্টে আপিল করতে মামলার নকল সংগ্রহ করেন তারা। কিন্তু সারাদেশে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মাদক ব্যবসায়ীদের মৃত্যুর ঘটনা শুরু হওয়ার পর তারা আর জজকোর্টে জামিন আবেদনই করেননি।
একইভাবে ২০১৭ সালের ১৭ এপ্রিল ২০ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন মো. মোজাহার। নিম্ন আদালত ও উচ্চ আদালতে জামিন চেয়েও পাননি এই ইয়াবা গডফাদার। গত ১০ মে ফের জামিন চাইতে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালত থেকে মামলার নকল সংগ্রহ করেন তিনি। কিন্তু মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হওয়ার পর তিনিও আর জামিন আবেদন করছেন না।
শুধু এই তিন অভিযুক্ত ইয়াবা গডফাদার নন, গত ১৫ মে থেকে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি মাদক মামলার আসামিদের জামিন আবেদন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। জীবন বাঁচাতে তারা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারকেই নিরাপদ ভাবছেন। তাই মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হওয়ার পর ১৬ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কোনো ইয়াবা মামলার আসামি জামিনে বের হননি। ২৭ থেকে ৩০ মে পর্যন্ত চোলাই মদ ও গাঁজার মামলার ৮-১০ জন আসামি জামিন নিয়ে বের হয়েছেন মাত্র। মাদক মামলার আসামিরা জামিন চাওয়া বন্ধ করে দেওয়ায় চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে এই প্রথমবারের মতো সাত হাজার ৭০০ বন্দি থাকার রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে, যা এ কারাগারের বন্দি ধারণ ক্ষমতার সাড়ে চারগুণ বেশি।
চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল কবির চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির মধ্যে ৭০ থেকে ৭৫ ভাগই মাদক মামলার আসামি। এর মধ্যে ইয়াবা মামলার আসামি আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। কিছু নারী আসামিও আছে- যারা কাউন্সেলিং করার পর কারাগার থেকে জামিনে বের হয়ে পরে আবারও মাদকের মামলায় কারাবন্দি হয়েছেন।’
এক প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র জেল সুপার মো. ইকবাল কবির চৌধুরী বলেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মারা যাচ্ছে, এ বিষয়টি সবার নজরে আসার পর গত ১৫ দিনে ইয়াবা মামলার কোনো আসামি জামিনে বের হয়নি। এতে হঠাৎ করেই বন্দির সংখ্যা বেড়ে সাত হাজার ৭০০ জনে পৌঁছেছে।’
চট্টগ্রাম মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট ফখরুদ্দিন চৌধুরীও জামিন আবেদন কমে আসার কথা স্বীকার করে বলেন, আগে যেখানে প্রতিদিন গড়ে একশ’র মতো আবেদন থাকত, এখন তা ৭ থেকে ১০টিতে নেমে এসেছে।
আদালত ও কারাগার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা এক হাজার ৮৫৩ জন। গত ৩০ মে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা দাঁড়ায় সাত হাজার ৬৯৫ জন। এর মধ্যে নারী বন্দি ৩৫৬ জন। গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রথম সাত হাজারে উন্নীত হয়। পৌনে দুই মাসের ব্যবধানে এই কারাগারে বন্দির সংখ্যা প্রায় সাতশ’ বেড়েছে। কারাগারের পাঁচটি কারা ভবনের প্রতিটি ওয়ার্ড, সেল, কারা হাসপাতালে এখন গাদাগাদি করে থাকছেন বন্দিরা। কারাবন্দি শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে আছেন- ১০ লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার মোহাম্মদ হোসেন ও দয়াল কৃষ্ণ, এক লাখ ইয়াবাসহ গ্রেফতার দুই ভাই মো. মোবারক ও মো. সালমান, এক লাখ ২৪ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার মো. বিপ্লব, মো. সুমন প্রমুখ। সমকাল