বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে এক শিক্ষানবীশ আইনজীবীকে শরীয়তপুরে আদালত ও আদালত প্রাঙ্গণে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে জেলা আইনজীবি সমিতি।
আইনজীবি সমিতি সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়া উপজেলার দিনার গ্রামের মোকলেছ সিকদারের পুত্র শিক্ষানবীশ আইনজীবী মো. রাশেদ সিকদার শরীয়তপুর সদর উপজেলার গঙ্গাধরপট্টি গ্রামের এফ এম জয়নাল আবেদীনের মেয়ে মোনালিসাকে বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে ধর্ষণ করে। মোনালিসা ওই শিক্ষানবীশ আইনজীবীর বিরুদ্ধে প্রতারণামূলক বিবাহ ও ধর্ষণের অভিযোগ এনে জেলা আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে প্রাথমিক পর্যায়ে প্রমাণিত হওয়ায় এ আদেশ দিয়েছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. আবু সাঈদ। এ আদেশ অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করলে আইনজীবির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে । মোনালিসা গত ১৭ মে জেলা আইনজীবী সমিতির বরাবর অভিযোগ দায়ের করে। জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু সাঈদ নিজেই অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে ঘটনার সত্যতা পায়।
ভুক্তভোগী মোনালিসা বলেন, আমার সঙ্গে প্রতারণা করে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষানবীশ আইনজীবি রাশেদ আমার জীবন নষ্ট করেছে। আমি ওর বিচার চাই।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আবু সাঈদ বলেন, ‘শিক্ষানবীশ আইনজীবি বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে ধর্ষণের অভিযোগে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবীদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। পরবর্তীতে জেলা আইনজীবী সমিতির রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে জানা যায়, রাশেদ সিকদার শিক্ষানবীশ আইনজীবীর তালিকাভূক্ত না। তাই রাশেদ সিকদারের বিরুদ্ধে জেলা আইনজীবী সমিতি এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে আদেশের কপি বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও অভিযোগকারীকে প্রেরণ করা হয়েছে।’
জানা যায়, নড়িয়া উপজেলার দিনার গ্রামের রাশেদ শিকদার শরীয়তপুর জজ কোর্টের একজন শিক্ষানবীশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করছেন। শরীয়তপুর আদালতের একজন সরকারি আইনজীবী হিসেবে নিজেকে বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দেয়ারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। এমন অবস্থায় এক গৃহবধূ আইনি সহায়তা নিতে এসে আদালতে রাশেদ শিকদারের সাথে পরিচয় হয়। পরে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভূয়া কাবিনে পাঁচ লাখ টাকা দেন মোহরে গেল জানুয়ারী মাসে ওই গৃহবধূকে বিয়ে করে। এরপর থেকে শরীয়তপুর জেলা শহরের একটি ভাড়া বাসায় স্বামী-স্ত্রী হিসেবে এক সাথে বসবাস করে আসছিলেন তারা।
হঠাৎ করে ঘটনার শিকার ওই গৃহবধূ প্রশাসনিক কাজে কাবিন নামার প্রয়োজন হয়। গেল মে মাসে রাশেদ সিকদারের কাছে মেয়েটি তার কাবিনের কাগজ চায়। এই নিয়ে দুজনের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে রাশেদ মেয়েটিকে পিটিয়ে আহত করে এবং স্ত্রী হিসেবে অস্বীকার করে। পরে জানা যায় রাশেদ কাবিনের নামে একটি ভূয়া রেজিষ্টার বহিতে মেয়েটির স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছিল। ওই গৃহবধূ স্বামীর অধিকার ফিরে পেতে রাশেদের পিছনে ঘুরতে থাকে। সমাজের বিভিন্ন ধরনের অপবাদ উঠে মেয়েটির উপর। অপবাদ সইতে না পেরে প্রায় দেড় মাস আগে মেয়েটি আত্মহত্যার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে এনে ভর্তি করে। প্রায় সাতদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর মেয়েটি সুস্থ্য হয়। এর পর তাকে কাবিন রেজিষ্টার করে দেওয়া হবে বলে মেয়েটির সাথে আবারও মিশে কয়েক দিন এক সাথে বসবাস করে। এ সময় স্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলে ওই মেয়েটির কাছে জমানো থাকা প্রায় ৭ লাখ টাকা নিয়ে যায় রাশেদ। কিন্তু তাকে কোন কাবিন রেজিষ্ট্রি করে না দিয়ে মেয়েটিকে রেখে আবারো পালিয়ে যায় রাশেদ। এরপর গেল ১৭ মে রাশেদের বিচার চেয়ে শরীয়তপুর জেলা আইজীবী সমিতির কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে ঘটনার শিকার ওই গৃহবধূ।
একইসাথে রাশেদ ঐ গৃহবধূকে স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে রাজি না হওয়ায় তার ধার্য করা দেনমোহর ও খোরপোষ বাবদ ৫ লক্ষ টাকা মেয়েটিকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসের মধ্যে মেয়েটিকে রাশেদ ওই টাকা পরিশোধ করবে বলে সময় দেয় হয়েছে।