খুন না করেও হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ভারতের দিল্লির তিহার কারাগারে প্রায় ১০ বছর বন্দি থাকার পর দেশে ফিরে আবার (কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার) থাকা বাদল ফরাজিকে মুক্ত করতে তার পক্ষে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী।
আইনজীবী দু’জন হলেন- ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওসার।
হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চে দেশের বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত খবরটি উপস্থাপন করেন তারা। এরপর হাইকোর্ট দুই আইনজীবীকে এ বিষয়ে রিট করার পরামর্শ দিয়েছেন। এরপর আদালতে পরামর্শ অনুযায়ী খুনের মামলায় আসামি হয়ে প্রায় ১০ বছর জেল খাটা বাদল ফরাজীকে মুক্ত করার জন্য বাংলাদেশের হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে।
আজ সোমবার (৯ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো.খায়রুল আলমের হাইকোর্ট বেঞ্চে বিষয়টি শুনানি হতে পারে।
এর আগে, রোববার (৮ জুলাই) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আইনজীবী ব্যারিস্টার কাউছার রিটটি দায়ের করেন। রিটের পক্ষে লড়বেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার হুমায়ন কবির পল্লব।
রিটে বাদল ফরাজীকে জেলখানায় আটক রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
পরে আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব গণমাধ্যমকে বলেন, বাদল ফরাজি নির্দোষ। তাকে বন্দি বিনিময়ের মাধ্যমে ভারতের কারাগার থেকে ফিরিয়ে আনা হলেও কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নির্দোষ ব্যক্তিকে কেন কারাগারে রাখা হবে? বাদল ফরাজী নির্দোষ এ নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ আজ আমরা আদালতের নজরে এনেছিলাম। আদালতে বিষয়টি উপস্থাপন করার পর আদালত আমাদেরকে লিখিত আবেদন করতে বলেন। পরে আমরা লিখিত আবেদন করেছি।
উল্লেখ্য ভারতের দিল্লির তিহার জেলে খুনের মামলায় আসামি হয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে জেল খাটার পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন বাদল ফরাজী নামে এক যুবক। তাকে সেদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে তাকে জেট এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটযোগে ভারত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায়, বাগেরহাটের মোংলা বন্দরের কাছে ১৭ নম্বর ফারুকি রোডের বাসিন্দা আবদুল খালেক ফরাজী ও সারাফালি বেগমের ছেলে বাদল। টি এ ফারুক স্কুলের অষ্টম শ্রেণি পাস বাদলের ইচ্ছা ছিলো তাজমহল দেখবে। এমন ইচ্ছায় ২০০৮ সালের ১৩ জুলাই দুপুরে বেনাপোল অভিবাসন কার্যালয়ে সব প্রক্রিয়া শেষ করে ভারতের হরিদাসপুর সীমান্তে প্রবেশের পরই সেখানকার একটি খুনের অপরাধে বাদলকে আটক করে বিএসএফ। হিন্দি বা ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে না পারার কারণে বিএসএফের কর্মকর্তাদের বোঝাতেই পারেননি যে খুনের অভিযোগ যে (বাদল সিং) কে খোঁজা হচ্ছে তিনি সেই ব্যক্তি নন।
২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনিতে এক বৃদ্ধাকে খুনের অভিযোগে বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিলো পুলিশ। তাকে ধরতে সীমান্তেও সতর্ক করা হয়েছিলো। কিন্তু শুধু দু’জনের নাম এক হওয়ায় বাংলাদেশি নাগরিক বাদল ফরাজীকে আটক করে বিএসএফ। পরে ওই খুনের অভিযোগে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নম্বর ধারায় অভিযোগ দায়ের করা হয় বাদলের বিরুদ্ধে।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বাদলকে দোষী সাব্যস্ত করে দিল্লির সাকেট আদালত বাদলের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। দিল্লি হাইকোর্টও নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। পরে বাদল ফরাজীর স্থান হয় দিল্লির তিহার জেলে। বিনা দোষে এই সাজা মেনে না নিয়ে বাদল ফরাজী দিল্লিতে বাংলাদেশ হাই-কমিশনের সহায়তায় সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করেন। কিন্তু শীর্ষ আদালতও বাদলের আবেদন খারিজ করে দেন। ফলে গত ১০ বছরের বেশি সময় ধরে জেলেই কাটাতে হয়েছে বাদলকে।
পরে ভারতীয় একটি এনজিও বাদল ফরাজীর ঘটনা জানতে পেরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে। ঢাকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় ২০০৪ সালের বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।