কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জঙ্গি কর্মকাণ্ডের মিল রয়েছে এমন মন্তব্য করায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামানের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।
সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা আন্দোলন প্রসঙ্গে আজ মঙ্গলবার দুপুরে (১০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এ মন্তব্য করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে অতি সম্প্রতি ঢাবি কর্তৃপক্ষের বিশেষ করে ভাইস-চ্যান্সেলর (ভিসি) বক্তব্য রহস্যজনক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম পৃথিবী বিস্তৃত। কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে যখন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীরা সোচ্চার এবং সকল মহল যখন এই আন্দোলনকে যৌক্তিক আন্দোলন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, ঠিক তখনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেই সাধারণ কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের জঙ্গি হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাদের জঙ্গি সংগঠনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।
‘এর পেছনে কোনো জঙ্গি সংগঠনের হাত আছে বলে আমরা মনে করি না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি সরকারের হীন স্বার্থ চরিতার্থে কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা আন্দোলনে জঙ্গি সম্পৃক্ততা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্কিত করেছেন। যেখানে উপাচার্য এই ধরনের বক্তব্য রাখেন, সেখানে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা আন্দোলনকারীদের মারধর করবে এটাই স্বাভাবিক।’
জয়নুল আবেদীন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর এই ধরনের অমানবিক হামলা ও তাদের জঙ্গিবাদের দিকে ঠেলে দেওয়া কোনো সচেতন নাগরিক মেনে নিতে পারে না। ঢাবি ভিসির দায়িত্ব হচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তা বিধান করা। অথচ তিনি তা না করে নানা রকম উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে করে সরকারের হীন স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত রয়েছেন। ’
‘ইতোমধ্যে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে এবং অনেককে নির্মমভাবে পিটিয়ে পঙ্গু করা হয়েছে। অনেকে হাসপাতালের বেডে অসুস্থ অবস্থায় কাটাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্ট বার অনতিবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং হামলার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে।’
আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের গ্রেপ্তার না করার দাবি জানিয়ে জয়নুল আবেদিন আরও বলেন, ‘আমরা দেখছি, মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার ছাত্রছাত্রীদের ৫ দিন, ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। গ্রেপ্তার করা সব ছাত্রকে বিনা পয়সায় আইনি সহায়তা দেবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি।’
তিনি বলেন, এ যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি আমাদের সমর্থন রয়েছে। তাই সরকারকে অনুরোধ করবো কাল বিলম্ব না করে শিক্ষার্থীদের এ দাবি মেনে নিয়ে গেজেট প্রকাশ করুন।
‘সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারপতি এবং সাবেক দুইজন ভাইস-চ্যান্সেলরের সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্টতা জনসম্মুখে প্রকাশের জোর দাবি জানাচ্ছি,’ যোগ করেন জ্যেষ্ঠ এ আইনজীবী।
এ সময় সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন, সহ-সভাপতি গোলাম মোস্তফা, গোলাম রহমান ভূঁইয়া, কোষাধ্যক্ষ নাসরিন আক্তার, সিনিয়র সহ সম্পাদক কাজী মো. জয়নুল আবেদীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত রোববার নিজ কার্যালয়ে কোটা আন্দোলন নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) আখতারুজ্জামান বলেন, ‘তালেবান জঙ্গিরা বিভিন্ন গোপন আস্তানা থেকে যে রকম উসকানিমূলক ভিডিও বার্তা পাঠায়, তার অবিকল উগ্র চরমপন্থী মতাদর্শী প্রচারণামূলক ভিডিও আমি নিজে দেখেছি।’
উপাচার্য বলেন, ‘তালেবান নেতা মোল্লা ওমর ও ওসামা বিন লাদেনের মতো ভিডিও বার্তা পাঠানো হচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, জঙ্গিরা যেভাবে শেষ অস্ত্র হিসেবে নারীদের ব্যবহার করে, সেভাবে কোটা আন্দোলনেও ছাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় এসব মেনে নেবে না। ফৌজদারি অপরাধ করলে আইনের শাসন কার্যকর হতে হবে।