ভারতে ভুল বিচারের শিকার বাদল ফরাজীর কারামুক্তি চেয়ে করা রিটের ওপর আদেশের দিন আগামীকাল বুধবার (১১ জুলাই) ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
এ সংক্রান্ত রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার (১০ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আদেশের এ দিন নির্ধারণ করেন।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার কাউছার। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ।
আদালত বলেন, ‘আমরা মামলার ডকুমেন্টগুলো পর্যবেক্ষণ করে দেখবো। আগামীকাল (বুধবার) আপনারা আবার সাবমিশন (যুক্তি উপস্থাপন) করবেন এরপর আদেশ দেওয়া হবে।’
এর আগে গত ৮ জুলাই হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ সংক্রান্ত একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়। ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার কাউছার ওই রিট দায়ের করেন।
ওই রিটে বাদল ফরাজীকে জেলে আটক রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে রুল জারির আবেদন জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব ও পররাষ্ট্র সচিব এবং আইজি প্রিজনকে রিটে বিবাদী করা হয়।
বাদল ফরাজীকে নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ওই দুই আইনজীবী গত ৮ জুলাই বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের আদালতের নজরে আনেন। তারা এ ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা চান। তবে আদালত তাদের রিট আবেদন করার পরামর্শ দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দুই আইনজীবী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদন দাখিল করেন।
ব্যারিস্টার হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, ‘বাদল ফরাজীর পরিচয় নিয়েই যেখানে প্রশ্ন রয়েছে, সেখানে ভারতের আদালত তাকে বাদল সিং হিসেবে ধরে নিয়ে বিচার করেছে। ভারতে ভুল বিচারের শিকার হয়েছেন বাদল ফরাজী। এটা স্বীকার করে নিয়েছে দুই দেশের সরকারই। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এ কারণে আইনের দৃষ্টিতে বাদল ফরাজী নির্দোষ ব্যক্তি। তাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনা হলেও কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক রাখা হয়েছে। নির্দোষ ব্যক্তিকে কেন কারাগারে রাখা হবে? এ কারণে রিট আবেদন করা হয়।’
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ৬ মে দিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় দিল্লির পুলিশ বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল। ওই বছরের ১৩ জুলাই ট্যুরিস্ট ভিসায় বেনাপোল সীমান্ত পার হওয়ার পরপরই ওই হত্যা মামলায় বাদল ফরাজীকে গ্রেফতার করে ভারতের পুলিশ। বাদল সিং মনে করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর সেখানে বিচার শেষে তাকে ওই মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তিনি ভারতের বিহার কারাগারে গত ১০ বছর ধরে সাজা ভোগ করছিলেন।
পরে ভারতীয় একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) বাদল ফরাজীর ঘটনা জানতে পেরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়। তারা ঢাকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের পর বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় ৬ জুলাই তাকে দেশে ফেরত আনা হয়। এরপর তাকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়।