বিনা দোষে হত্যা মামলায় আসামি হয়ে ভারতের দিল্লির তিহার জেলে প্রায় ১০ বছর ধরে বন্দি ছিলেন বাদল ফরাজী নামে এক বাংলাদেশি। বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় বর্তমানে তিনি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে আটক আছেন। তার মুক্তির জন্য দায়ের করা রিটের শুনানি শেষে তা খারিজ করে দেয়া হয়েছে। এর ফলে বন্দি থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না বাদল ফরাজী।
আজ বুধবার (১১ জুলাই) বিচারপতি জেবিএম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এর আগে গতকাল একই বেঞ্চে শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজ (বুধবার) দিন ধার্য করা হয়।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব এবং তার সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ।
ভারতের জেল থেকে বাংলাদেশের জেলে প্রেরণ করা বাদল ফরাজীর মুক্তি চেয়ে গত ৮ জুলাই হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন দুই আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার। রিটে বাদল ফরাজীকে জেল খানায় আটক রাখা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল জারির আবেদন করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাকে মুক্তি দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, পররাষ্ট্র সচিব ও আইজি প্রিজনকে বিবাদী করা হয়।
আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব বলেন, বাদল ফরাজী আর ভারতের ওই মামলার অভিযুক্ত ব্যক্তি একই নয়। তার নাম ছিল বাদল সিং। ওই হত্যাকাণ্ডের সময় বাদল ফরাজি ভারতে ছিল না। তখন তিনি বাংলাদেশে ছিলেন। তিনি নির্দোষ। তাকে ফিরিয়ে আনা হলেও কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। নির্দোষ ব্যক্তিকে কেন কারাগারে রাখা হবে এই মর্মে রিট দায়ের করেছিলাম। আজ সেই রিটের শুনানি হয়েছে। কাল এ বিষয়ে আদেশের জন্য দিন ঠিক করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, ভারতের দিল্লির তিহার জেলে খুনের মামলায় আসামি হয়ে প্রায় ১০ বছর ধরে জেল খাটার পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন বাদল ফরাজী নামে এক বাংলাদেশি। তাকে সে দেশ থেকে ফিরিয়ে এনে বর্তমানে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে।
শুক্রবার (৬ জুলাই) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে তাকে জেট এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটযোগে ভারত থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে পুলিশের একটি স্পেশাল ব্রাঞ্চ তাকে কেন্দ্রীয় কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা যায়, ২০০৮ সালে টুরিস্ট ভিসায় বেনাপোল বর্ডার পার হওয়ার পরপরই দিল্লির অমর কলোনির এক বৃদ্ধা হত্যা মামলায় বাদল ফরাজীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২০০৮ সালের ৬ মে সেই বৃদ্ধাকে হত্যার ঘটনায় দিল্লির পুলিশ বাদল সিং নামে এক ব্যক্তিকে খুঁজছিল। ওই বছরের ১৩ জুলাই বেনাপোল বর্ডার দিয়ে বাদল ফরাজী ভারতে প্রবেশ করলে বাদল সিং মনে করে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষা না জানার কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাকে কারাবন্দি হয়ে থাকতে হয়।
পরে ভারতীয় একটি এনজিও বাদল ফরাজীর ঘটনা জানতে পেরে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করে। ঢাকার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চেষ্টায় ২০০৪ সালের বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত আনা হয়েছে।