শিক্ষানীতি-২০১০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রণীত ‘শিক্ষা আইনটি’ অবশেষে বাদ দিতে হচ্ছে। শিক্ষায় বিদ্যমান ৭৩টি আইন এবং অন্য বিধি ও নীতিমালা নিয়ে তৈরি হবে সমন্বিত শিক্ষা আইন। তবে আগের খসড়ায় যেভাবে কোচিং বন্ধসহ নোট ও গাইড বই নিষিদ্ধ ছিল, তা থাকছে সমন্বিত শিক্ষা আইনেও। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে ‘মাদার ল’ হিসেবে বিবেচিত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
নতুনভাবে শিক্ষা আইন তৈরির উদ্যোগের অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার (১০ জুলাই) শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব জাভেদ আহমেদের সভাপতিত্বে এতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদফতরের প্রতিনিধিরা যোগ দেন।
বৈঠক শেষে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ও আইনের খসড়া পরীক্ষায় গঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সভাপতি জাবেদ আহমেদ জানান, শিক্ষার বিভিন্ন ধারা কেবল শিক্ষার জন্য নিবেদিত দুই মন্ত্রণালয় পরিচালনা করে না। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা ছাড়াও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, নৌ-মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন কোর্স, ডিগ্রি ও প্রোগ্রাম পরিচালিত হয়। ওইসব ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন ও নীতি একীভূত করেই এবারকার আইনটি প্রণীত হবে।
বৈঠকের পর অতিরিক্ত সচিব আরও বলেন, মন্ত্রিসভা বলেছে, খসড়া আইনটি কম্প্রিহেন্সিভ (সম্পূর্ণ) না। দেশে শিক্ষা সংক্রান্ত ৫০টির মতো আইন রয়েছে। যদি শিক্ষা আইন করতে হয়, তাহলে ওইসব আইনকে সমন্বয়, সংযোজন করতে হবে। সংশ্নিষ্ট যত আইন রয়েছে, আমরা সেগুলো সমন্বয় করে খসড়া তৈরি করব।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ আইনের একটি নতুন ধারা ও বিন্যাস রচনা করা হবে। নতুন নামে প্রণীত আইনের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার আলোকেই প্রণীত হয়ে মন্ত্রণালয়ে অভ্যন্তরীণভাবে নিরীক্ষা শেষে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংসহ অন্যান্য সব প্রক্রিয়া শেষ করে, তবেই মন্ত্রিসভার পর্যালোচনার জন্য পাঠানো হবে। সেখানে অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে। তাতে বেশ কয়েক মাস চলে যাবে। তা বর্তমান সরকারের চলতি মেয়াদে শেষ করা সম্ভব হবে না এমনটি নিশ্চিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, নতুন শিক্ষা আইন প্রণয়নের সময় বিভিন্ন আইন, নীতিমালা, বিধিবিধান, প্রবিধানসহ নানা বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে তা অনুসরণ করা হবে। এ সব বিষয়ে আগের আইনগুলোকে প্রয়োজনে রহিত বা স্থগিত করার ব্যাপারেও উদ্যোগ ও করণীয় নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত ও নির্দেশনা চাওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, নোট ও গাইড নিষিদ্ধকরণ এবং পাবলিক পরীক্ষা অপরাধ দমনে পৃথক আইন, প্রশ্নপত্র ফাঁস, প্রকাশ বা বিতরণের সাথে জড়িত থাকার শাস্তি, নোট গাইড নিষিদ্ধ করতে হলে আগের আইনের কী হবে সে বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রস্তাবিত শিক্ষা আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা রয়েছে এমন আইন, বিধি, প্রবিধান, রীতি পর্যবেক্ষণ করতে মন্ত্রিপরিষদ থেকে বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত আইন বা সংশোধনীর বিষয়ে উচ্চআদালতের সিদ্ধান্ত বা পর্যবেক্ষণ (যদি থাকে), আইন প্রণয়ন বা সংশোধনের উদ্দেশ্য ও এর সম্ভাব্য প্রভাব এবং সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক আইন, চুক্তি, কনভেশন, সমঝোতা স্মারক, সিদ্ধান্ত, প্রটোকল খতিয়ে দেখার নির্দেশনা দিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এখন এসব নির্দেশনার আলোকেই নতুন আইন প্রণয়ন করা হবে।
উল্লেখ্য ২০১২ সাল থেকে শিক্ষা আইন তৈরির কাজ চলছে। নানা প্রক্রিয়া শেষে গতবছরের সেপ্টেম্বরে আইনের একটি চূড়ান্ত খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। কিন্তু আইনটি তৈরিতে অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয়হীনতা, খসড়ায় ব্যাপক অসামঞ্জস্য, বৈপরিত্য ও বিদ্যমান বিভিন্ন আইনের সঙ্গে অসঙ্গতি থাকায় গত মে মাসে মন্ত্রিসভা থেকে এটি ফেরত আসে। তাতে ১৩টি পর্যবেক্ষণ ছিল। এরপর এটি নিয়ে প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।