নয় অর্থবছরে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর থেকে সরকারের কর বহির্ভূত আয় হয়েছে পৌনে ৩৪ কোটি টাকারও বেশি। ভোক্তা অধিকার বিরোধী কার্যকলাপের দায়ে এই অর্থবছরগুলোতে প্রায় সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করেছে বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের এই সংস্থাটি। আদায় করা এ অর্থের মধ্যে ২৫% হিসাবে দেওয়া হয়েছে অভিযোগকারীদেরকে। আর বাকী অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করেছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
জাতীয় অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, ভেজাল পণ্য তৈরি, পচা-বাসি বা মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, ওজন ও পরিমাপে কারচুপি, নির্ধারিত মূল্যের অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রিসহ সংগঠিত ভোক্তা বিরোধী বিভিন্ন অপরাধে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর পর্যন্ত ৪২ হাজার ৫৩৫টি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদন্ড দিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে মোট ৩৪ হাজার ৪৮ লাখ ৯ হাজার ১০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ শতাংশ হিসাবে ৩ হাজার ৭২১ জন অভিযোগকারীকে ৬১ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫২টাকা দেওয়া হয়েছে। বাকী ৩৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৮ টাকা পেয়েছে সরকার।
অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম লস্কর বলেন, প্রচার-প্রচারণা ও ভোক্তাদের সচেতনতার কারণে জরিমানা আদায় বেড়েছে। ফলে সরকারের আয়ও বেড়েছে। তিনি বলেন, ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিধি ও লোকবল বেড়েছে। এর ফলে বেড়েছে আমাদের বাজার অভিযান। অভিযোগ যত বেশি আসবে এবং বাজার অভিযান যত বাড়বে ততই জরিমানা আদায় হবে। চলতি অর্থবছরে জরিমানা আদায় এবং এ খাত থেকে সরকারের আয় দ্বিগুণেরও বেশি হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন অধিদপ্তরের এই মহাপরিচালক।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ভোক্তা অধিদপ্তর থেকে সরকারের আয় হয়েছিল ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা। যা ১৩ কোটি ৫৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪৫০ টাকা বেড়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ টাকা। আর মোট ৯ অর্থবছরের হিসাব বিবেচনায় নিলে সরকারের মোট আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৮৬ লাখ ৩৫ হাজার ৫৪৮ টাকা।
এদিকে শুধু ২০১৭-১৮ অর্থবছরেই ১৩ হাজারেরও বেশি প্রতিষ্ঠানকে অর্থদন্ড দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আলোচ্য সময়ে প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। যা এর আগের অর্থবছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ হাজার ৭২৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে মোট ৬ কোটি ৮৭ লাখ ৯ হাজার ৩০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছিল।
আদায় করা জরিমানার মধ্যে ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৯৫০ টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়েছে। যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ১০২.৬০ শতাংশ বা ৬ কোটি ৮৯ রাখ ১ হাজার ৩২৭ টাকা বেশি। আর ২৫ শতাংশ হিসাবে বাকী ৩৯ লাখ ২৬ হাজার ৭৫০ টাকা পেয়েছেন ১ হাজার ৯৫২ জন অভিযোগকারী ভোক্তা।
এর আগের বছর ১ হাজার ৪১৬ জন ভোক্তা ১৫ লাখ ৫১ হাজার ৬৭৭ টাকা পেয়েছিলেন। সেই হিসাবে অভিযোগের ভিত্তিতে ভোক্তাদের প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণ বেড়েছে আড়াই গুণেরও বেশি।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, আগের বছরের তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেড়েছে ভোক্তাদের অভিযোগ। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে সংস্থাটিতে মোট ৯ হাজার ১৯টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়ে। এর আগের অর্থবছরে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ আসে ৬ হাজার ১৪০টি। অর্থাৎ আগের অর্থবছরের তুলনায় সর্বশেষ সমাপ্ত অর্থবছরে ভোক্তাদের অভিযোগ বেড়েছে ১.৪৭ গুণ বা ২ হাজার ৮৭৯টি।
(আমাদের অর্থনীতি)