আসামি জামিন না হওয়ায় আদালতে হট্টগোল এবং বিচারকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় সিরাজগঞ্জে দুই এপিপিসহ চার আইনজীবীকে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে।
হাকিম হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে গত মঙ্গলবার (১০ জুলাই) ওই আইনজীবীদের কারণ দর্শাতে বলা হয়।
নোটিস পাওয়া আইনজীবীরা হলেন এপিপি আব্দুর রঊফ পান্না, এপিপি এস এম দীন আমিন (দীনু), তৈফিকুর রহমান জয় ও সাইফুল ইসলাম।
আদেশে বলা হয়, গত ১০ জুলাই জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত-১ এর এজলাসে বিচারকার্য চলার সময় এ ঘটনা ঘটে।
এতে আরও বলা হয়, গত ৯ জুলাই শাহজাদপুর আমলী আদালতে একটি জিআর মামলার সাত আসামির জামিন আবেদন করেন তৈফিকুর রহমান জয়। এপিপি আব্দুর রঊফ পান্না ও এপিপি এস এম দীন আমিন (দীনু) জামিন শুনানীতে অংশ নেন।
“পাঁচ আসারি বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য অপরাধের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকায় আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক। এ আদেশ দেওয়ার পর পরই আইনজীবীরা বিষয়টি বিবেচনায় নিতে হাকিমকে অনুরোধ করেন।
“প্রকাশ্য আদালতে আসামিদের জামিন নামঞ্জুর আদেশের পর আইনগতভাবে আমলী আদালতে সুযোগ না থাকায় মৌখিক আবেদন অগ্রাহ্য করেন ম্যাজিস্ট্রেট।”
আদেশে আরও বলা হয়, এরপর ১০ জুলাই দুপুরে একই আদালতে বিচারকাজ চলার সময় তৈফিকুর রহমান জয় ও সাইফুল ইসলামসহ কয়েকজন শিক্ষানবীশ আইনজীবী এজলাসে গিয়ে বেঞ্চ সহকারী আশরাফুল ইসলামের কাছে একটি দরখাস্ত দেন এবং হাকিমের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন।
“এছাড়া সাইফুল ইসলাম হাকিমকে চেয়ার উঠিয়ে আঘাত করার জন্য বার বার এগিয়ে যান। এসময় অন্যান্য আইনজীবী, কোর্টের কর্মচারী ও কর্তব্যরত পুলিশ হাকিমকে খাসকামরায় নিয়ে রক্ষা করেন।”
এ ঘটনায় ফৌজদারী অপরাধের অভিযোগ এনে আদালতের কাজে বাধা সৃষ্টি, ভীতিকর পরিস্থিতি ও ত্রাস সৃষ্টি, আদালত অবমাননা ও পেশাগত অপরাধের অভিযোগ এনে তৈফিকুর রহমান জয় ও সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং কেন বার কাউন্সিলকে জানানো হবে না তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে ওই আদেশে।
আদেশ প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে লিখিতভাবে তাদের কারণ দর্শানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও এপিপি আব্দুর রঊফ পান্না ও এপিপি এস এম দীন আমিন (দীনু) পেশাগত দায়িত্ব অনুযায়ী জামিনে বাধা না দিয়ে তাদের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেওয়াকে পেশাগত অসদাচরণ উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এপিপিশিপ বাতিলের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে না তার কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে তৈফিকুর রহমান জয় বলেন, “ওই মামলার নথিতে মেডিকেল সার্টিফিকেট নাই, তাই ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের জামিন দিতে বাধ্য, কিন্ত দেয়নি। আবার নটপ্লেস চাইলে তাতেও রাজি হননি।”
এপিপি আব্দুর রঊফ পান্না বলেন, “ম্যাজিস্ট্রেট জামিন বা নটপ্লেস কোনোটায় রাজি না হওয়ায় আদালতে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কিন্তু চেয়ার নিক্ষেপের মত কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাওসার আহম্মেদ লিটন বলেন, জেলা ও দায়রা জজ সাহেব ম্যাজিস্ট্রেট ও আইনজীবী উভয়ের অভিভাবক। তাই বিষয়টি সমাধানে তাকে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সমিতির পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে।”