নতুন অর্থবছর শুরু হয়ে গেছে। চাইলে আপনি এখনই বার্ষিক আয়কর বিবরণী জমা দিতে পারবেন। রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরের আয়কর অধ্যাদেশে যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, তা জেনে নিতে হবে।
১ জুলাই থেকে আয়কর বিবরণী জমা নেওয়া শুরু হয়েছে। তা চলবে আগামী ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। সাধারণত করদাতারা শেষ মুহূর্তে গিয়ে রিটার্ন জমা দিতে বেশি উৎসাহ দেখান। বিশেষ করে, আয়কর মেলা তো জনারণ্যে পরিণত হয়। শেষ দিকে তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক ভুলভ্রান্তি হতে পারে। হাতে পাঁচ মাস সময় থাকলেও করদাতারা এখনই রিটার্ন জমার প্রস্তুতি নিতে পারেন। এ জন্য সংগ্রহ করতে হবে নানা কাগজপত্র।
এবার আপনি রিটার্ন জমা দেবেন ২০১৭-১৮ আয়বর্ষের। অর্থাৎ ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আপনি যে আয় করেছেন, সেটির ওপর ভিত্তি করেই রিটার্ন জমা দিতে হবে। করযোগ্য আয় থাকলে ন্যূনতম তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। এ ছাড়া মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা গৃহসম্পত্তি থাকলে বার্ষিক রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী দেওয়া বাধ্যতামূলক।
এবার জেনে নেওয়া যাক, এবারের বাজেটে কী কী পরিবর্তন আনা হয়েছে। বাজেটে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতার জন্য যেসব পরিবর্তন আনা হয়েছে, সেগুলো অনুসরণ করেই বার্ষিক আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হবে।
করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই আড়াই লাখ টাকায় বহাল রাখা হয়েছে। এর মানে, কোনো ব্যক্তির আয় যদি বছরে আড়াই লাখ টাকার বেশি হয়ে থাকে, তবে অবশ্যই তাঁকে রিটার্ন জমা দিয়ে কর দিতে হবে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে এ বছরের জুন মাস পর্যন্ত হিসাব করে দেখুন, আপনি কত আয় করলেন। তবে এবার যে পরিবর্তনটি এসেছে, তা হলো করদাতার যদি কোনো প্রতিবন্ধী সন্তান থাকে, তাহলে আরও ৫০ হাজার টাকা আয় করলেও কর দিতে হবে না।
বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে এবার আরেকটি বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। বেতন যদি ১৮ হাজার টাকার বেশি হয়, তবে রিটার্ন দেওয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারি চাকরিজীবীদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে। কেননা, নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কোন কোন কর্মী রিটার্ন জমা দিয়েছেন, তা প্রতিবছর এপ্রিল মাসের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) জমা দিতে হবে। এমনকি কর্মীদের বেতন-ভাতা থেকে উৎসে কর হিসেবে কত টাকা কেটে রাখা হয়েছে, তা–ও জানাতে হবে। এসব শর্ত না মানলে ওই প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষা করা হবে।
রিটার্ন ফরম পূরণ ও হিসাব–নিকাশ করার সময় মনে রাখতে হবে, এবার পারকুইজিট সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। চিকিৎসা, স্বাস্থ্য, মোবাইল ফোনের বিলসহ বিভিন্ন ভাতা পান চাকরিজীবীরা। এই ভাতার একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত করমুক্ত। আগে পৌনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত করমুক্ত ছিল। এখন তা সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে চাকরিজীবীরা গত এক বছরে এসব খাতে ভাতা বাবদ আরও পৌনে এক লাখ বেশি পেলেও চিন্তা নেই, কর দিতে হবে না।
সারচার্জের ক্ষেত্রে এবার ধনী করদাতাদের করের হিসাব বদলে গেছে। কোনো করদাতার যদি নিজের নামে দুটি গাড়ি থাকে কিংবা সিটি করপোরেশন এলাকায় আট হাজার বর্গফুট আয়তনের ফ্ল্যাট বা গৃহসম্পত্তি থাকে, তাহলে সারচার্জ আরোপিত হবে। ওই করদাতা যত কর দেবেন, এর ওপর ১০ শতাংশ সারচার্জ দিতে হবে। উবার, পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিংয়ে গাড়ি দিলে অবশ্যই গাড়ির মালিককে রিটার্ন জমা দিতে হবে। এটি এই বাজেটের নতুন উদ্যোগ।
কোনো চাকরিজীবী বা করদাতার যদি গৃহসম্পত্তি থেকে আয় থাকে, তা–ও করের মধ্যে পড়বে। মূলত বাড়িভাড়ার আয়ই এখানে বেশি প্রযোজ্য। তবে গৃহসম্পত্তির মোট আয় থেকে এনবিআর অনুমোদিত নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত বাড়িঘর রক্ষণাবেক্ষণ খরচ, দারোয়ানের বেতন, সিটি করপোরেশন বা পৌরকর বাদ দিতে হবে।
চেক লিস্ট
শুধু আয়কর ও সম্পদ বিবরণীর ফরম পূরণ করে দিলেই হবে না। আয় কিংবা বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের বিপরীতে বেশ কিছু কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এ জন্য যেসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে সেগুলোর অন্যতম হলো, বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকি ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনি ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
কর রেয়াত নিতে চাইলে বেশ কিছু কাগজপত্র লাগবে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, জীবনবিমার কিস্তির প্রিমিয়াম রসিদ, ভবিষ্য–তহবিলে চাঁদার সনদ, ঋণ বা ডিবেঞ্চার, সঞ্চয়পত্র, শেয়ারে বিনিয়োগের প্রমাণপত্র, ডিপোজিট পেনশন স্কিমে (ডিপিএস) চাঁদার সনদ, কল্যাণ তহবিলে চাঁদা ও গোষ্ঠী বিমার কিস্তির সনদ, জাকাত তহবিলে দেওয়া চাঁদার সনদ।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন; অন্যান্য সিটি করপোরেশন এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ন্যূনতম কর যথাক্রমে ৫ হাজার টাকা, ৪ হাজার টাকা ও ৩ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে।