তানজিম আল ইসলাম: প্রায়ই শোনা যায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে পুলিশ মামলা দিয়েছে। অনেক সময় এ মামলাতে অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে সন্দেহভাজন অনেককে আটকও করা হয়। সাধারণত কোনো স্থানে যদি কোনো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভঙ্গ হয়, দাঙ্গা বা মারামারির মতো ঘটনা ঘটে কিন্তু কে বা কারা দায়ী, তা নিশ্চিত করে বলা না যায়, তখন অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করে থাকে পুলিশ। আবার এমনও হয় যে কোনো অপরাধ সংঘটিত হলো কিন্তু কোনো সংঘবদ্ধ চক্র বা কারও নাম জানা গেল না, তখনো অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা দিয়ে থাকে পুলিশ।
অজ্ঞাতনামা আসামি কাকে বলে
অজ্ঞাতনামা আসামি মানে এই নয় যে ভিন্ন কোনো মামলার আসামি। সাধারণত কোনো অপরাধ সম্পর্কে অভিযোগ দেওয়া হলে আসামির নাম-ঠিকানা নির্দিষ্ট করে দিতে হয়। এটাই এজাহার করার নিয়ম। তবে যদি ঘটনার সঙ্গে কে বা কারা জড়িত নির্দিষ্ট করে বলা না যায়, তবে আসামির নাম-ঠিকানার জায়গায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা লিখে মামলা করে। অনেক সময় আদালতে অভিযোগ করার সময়ও আসামির নাম-ঠিকানার জায়গায় অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে লেখা হয়।
থানায় মামলা হওয়ার পর এক বা একাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় মামলাটির তদন্ত করার জন্য। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনার তদন্ত করার সময় বিভিন্ন কৌশল নিয়ে থাকেন। আসামি অজ্ঞাতনামা হলেও কোনো সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায়। যদি তদন্ত কর্মকর্তা সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা খুঁজে পান, তাহলে তাকে গ্রেপ্তার দেখাতে পারেন। তবে সন্দেহজনক হলেই পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেপ্তার করলে তা মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়। পুলিশ অজ্ঞাতনামা আসামির নামে কাউকে হয়রানি করতে পারে না।
অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হলে করণীয়
আইনে অজ্ঞাতনামা ও নামধারী আসামি বা অভিযুক্তের ক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য বা শ্রেণি করা হয়নি। অন্যান্য অভিযুক্ত যেভাবে আইনের মুখোমুখি হতে হয়, অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবেও তা-ই করতে হয়। এজাহারে নাম না থাকলে সাধারণত আদালতে একটি যুক্তি উপস্থাপন করা যায় যে এজাহারে নাম নেই এবং সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে জামিন পেতে কিছুটা সহায়ক হয় এবং আদালত তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করেন। বিচার মানে সাক্ষ্য-প্রমাণেও তা গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা হয়। একজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে সোপর্দ করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামির নামে গ্রেপ্তার হলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠাতে হবে। আদালতে তখন আইনজীবীর মাধ্যমে জামিনের আবেদন করতে হবে। অনেক সময় গ্রেপ্তার করলে পুলিশ গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনকে অবগত করে। যদি না করে, তাহলে পুলিশকে অনুরোধ করতে হবে যেন আত্মীয়স্বজনকে অবগত করা হয়। তখন তাঁরাই আইনজীবী নিয়োগ করে জামিনের আবেদনের উদ্যোগ নেবেন। এ ছাড়া পুলিশ যদি রিমান্ড চায়, তাহলে রিমান্ড বাতিলের জন্য আবেদন করতে হবে। মনে রাখা জরুরি যে উচ্চ আদালত অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেওয়া সম্পর্কে কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। এ নির্দেশনা অমান্য করার সুযোগ নেই। যদি আদালত জামিন না দেন, তাহলে কয়েক দিন পরপর একই আদালতে জামিন চাওয়ার সুযোগ থাকে।
নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে দায়রা আদালতে এবং দায়রা আদালতে জামিন না দিলে ক্রমান্বয়ে হাইকোর্ট বিভাগে জামিন চাওয়ার সুযোগ আছে। একটি এজাহার যখন হয়, তার তদন্ত প্রতিবেদন আসতে সময় লাগে। জামিন পাওয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা মামলার তদন্তের জন্য কোনো সহায়তা চাইলে তা করা উচিত। নিজে নির্দোষ হলে তা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা উচিত। আদালতে প্রতি নির্ধারিত তারিখে হাজিরা দিতে হবে। এজাহারে অজ্ঞাতনামা হিসেবে থাকলেও অভিযোগপত্রে নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারে পুলিশ।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।