খুলনায় বহিরাগতদের হামলায় আইনজীবী সমিতির সভা পণ্ড হয়ে গেছে। হামলাকারীরা দুজন আইনজীবীকেও মারধর করে। এসময় বিধান ঘোষ ও আ. সোবাহান নামের দু’জন আইনজীবী আহত হয়েছেন। তারা খুলনা জেনারেল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
সমিতির নতুন ভবনের সভাকক্ষে গতকাল সোমবার (২৩ জুলাই) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে। ভবন নির্মাণে আর্থিক দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এ সাধারণ সভা আহ্বান করা হয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক আইনজীবী জানান, দুপুর ২টার সময় খুলনা আইনজীবী সমিতির নতুন ভবনের সভাকক্ষে সাধারণ সভা শুরু হয়। সভায় সভাপতিত্ব করছিলেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কাজী আবু শাহীন। সভা পরিচালনা করছিলেন অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান নান্নু। একপর্যায়ে আচমকা একদল বহিরাগত চিৎকার, চেচাঁমেচি করতে করতে সভাস্থলে প্রবেশ করে। তারা একাধিক আইনজীবীকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে এবং সভা বন্ধ করার জন্য বলে। অন্যথায় পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে বলে হুমকি দেয় তারা। ঘটনার আকস্মিকতায় উপস্থিত আইনজীবীরা হতবাক হয়ে পড়েন। তাঁরা সভা চলার বিষয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েন। অনেকেই সভাস্থল থেকে বেরিয়ে যান। পরে সাধারণ সভা বাতিল করা হয়।
একাধিক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভবন নির্মাণ নিয়ে দুর্নীতির ঘটনায় যারা জড়িত সেই পক্ষ বহিরাগতদের নিয়ে এসে আইনজীবীদের মারধর করে সভা পণ্ড করে দেয়। খুলনার আইনজীবী সমিতিতে অতীতে চাপ প্রয়োগ করে নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে; আর আজ (গতকাল) বহিরাগত দিয়ে আইনজীবীদের মারধর করা ও সভা পণ্ড করে দেওয়ার নতুন নজির তৈরি হলো।
প্রবীণ আইনজীবী ও সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যা হয়েছে, তা খুবই দুঃখজনক; এটি কোনোভাবেই কাম্য ছিল না।’
প্রসঙ্গত, খুলনা জেলা আইনজীবী সমিতির ‘বঙ্গবন্ধু ভবন’ নির্মাণের জন্য ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ৩ কোটি ১১ লাখ ৪২ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। ভবন নির্মাণকালে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে জেলা আইনজীবী সমিতির চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গত ১১ জুন ৬৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন বার কর্মকর্তাদের কাছে দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদন সোমবার সাধারণ সভায় উত্থাপন করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের এজেন্ডা ছিল। তদন্ত কমিটিতে আহবায়ক ছিলেন অ্যাড. এসএম মঞ্জুরুল আলম সাবেক সভাপতি অ্যাড. মো. আব্দুল মালেক, অ্যাড. চিশতি সোহরাব হোসেন শিকদার, অ্যাড. এমএম মুজিবর রহমান।
সদস্য ছিলেন, তদন্ত কমিটি ছয় মাস বিভিন্ন ভাউচার পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রতিবেদন দাখিল করেন।
এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির বলেন, ঘটনার সাথে সাথেই অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি বুঝে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।