তানজিম আল ইসলাম: হঠাৎ কোনো উকিল নোটিশ পেলে অনেকে ঘাবড়ে যান। নোটিশ পেয়ে দিগ্বিদিক ছুটে যান এর-ওর কাছে। কেউ যান আইনজীবীর চেম্বারে। পরিবারের সবাই যেন অস্থির হয়ে যান। কিন্তু উকিল নোটিশ পেয়ে কী করবেন, কী করবেন না—অনেকেই তা ঠিকঠাক বুঝে উঠতে পারেন না। কিন্তু উকিল নোটিশ মানে ফেলনাও নয়। এর আইনি গুরুত্ব রয়েছে। তবে আইনি নোটিশ আপনাকে আগে থেকে সতর্ক করতে পারে। আর অনেক অহেতুক মামলা-মোকদ্দমা থেকেও আপনি রেহাই পেতে পারেন। আদালতে যাওয়ার আগে সমস্যার সমাধান করারও সুযোগ থাকে।
উকিল নোটিশ কী
প্রথমেই মনে রাখতে হবে, উকিল নোটিশ মানেই মামলা নয়। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সাধারণত কোনো আইনজীবীর মাধ্যমে অভিযুক্ত ব্যক্তির কাছে কোনো নোটিশ পাঠানো হলে সেই নোটিশকে লিগ্যাল নোটিশ বা উকিল নোটিশ বলা হয়। উকিল নোটিশ মামলা নয়, তবে মামলা-মোকদ্দমা করার পূর্বপ্রস্তুতি বলা চলে। একজন আইনজীবীর মাধ্যমে প্রতিপক্ষের বা অভিযুক্তের কাছে তাঁর অভিযোগ তুলে ধরা হয় উকিল নোটিশের মাধ্যমে। এ নোটিশ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে হতে পারে। পারিবারিক বিষয়, জমিজমা থেকে শুরু করে আর্থিক বিষয়ে যেকোনো আইনি বিরোধ থাকলেই উকিল নোটিশ পাঠানো যায়। এ নোটিশে সাধারণত আইনজীবীর মাধ্যমে দাবিদাওয়া তুলে ধরা হয়। নোটিশে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয় এবং অনুরোধ করা হয় এ সময়সীমার মধ্যে বিরোধের সমাধান করতে। না হলে কোন আইনে কীভাবে মামলা-মোকদ্দমা করবে, সে বিষয়ে সতর্ক করে দেওয়া হয়। কিছু উকিল নোটিশ আছে, যা মামলা করার আগে দেওয়া বাধ্যতামূলক। যেমন চেক ডিজঅনার-সংক্রান্ত উকিল নোটিশ অবশ্যই দিতে হয় প্রতিপক্ষকে।
নোটিশ পেলে কী করবেন
কোনো আইনি নোটিশ পেলেই অস্থির না হয়ে সমস্যার সমাধান কীভাবে করা যায়, সেটা ভাবতে হবে আগে। উকিল নোটিশ পেয়েই যদি বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান করা যায়, তাহলে ভবিষ্যতে অনেক আইনি ঝামেলা ও ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। প্রথমেই আইনি নোটিশ পেলে দেখতে হবে এর বিষয়বস্তু কতটা যুক্তিসংগত এবং এর কোনো ভিত্তি আছে কি না। নোটিশে উল্লিখিত দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখতে হবে। যদি কোনো ধরনের ভিত্তি না থাকে কিংবা হয়রানি করার জন্য কেউ আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ পাঠান, তাহলে এর জবাব দিয়ে যুক্তি খণ্ডাতে হবে এবং প্রকৃত সত্য তুলে ধরতে হবে। একটি বিষয় জেনে রাখা খুব জরুরি যে আইনি নোটিশ পেয়ে কোনো আইনজীবীকে দোষ দিলে চলবে না। কারণ একজন আইনজীবী তাঁর মক্কেলের কাছ থেকে নির্দেশনা পেয়েই নোটিশ পাঠান। আইনজীবীর সত্য-মিথ্যা যাচাই করে নোটিশ দেওয়ার সুযোগ কম। তাই কোনো হয়রানিমূলক নোটিশ পেলে তার জবাব দিয়ে এর স্পষ্ট কারণ তুলে ধরা উচিত। নোটিশের জবাব একজন আইনজীবীর মাধ্যমেই দেওয়া উচিত। যদি নোটিশে উল্লিখিত অভিযোগের সত্যতা থাকে, তাহলে এ বিষয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করে নিতে পারেন। নোটিশটি যদি পারিবারিক বিষয় হয়, তাহলে আলোচনা করেই মিটিয়ে ফেলা উচিৎ। অনেকেই দেখা যায় উকিল নোটিশ পেলে ডাকপিয়নের কাছ থেকে গ্রহণ করতে চান না। এতে মাঝেমধ্যে উল্টো ফলও হতে পারে। কারণ নোটিশ আপনি গ্রহণ করেন আর না-ই করেন, আইনের ব্যাখ্যায় নোটিশটি ঠিকঠাক প্রেরণ করা হয়েছিল তা অনেক সময় প্রমাণ হয়ে যায়। নোটিশ গ্রহণ না করলে প্রকৃত দাবি বা অভিযোগ সম্পর্কে জানাও যায় না এবং মামলায় যাওয়ার আগে নিষ্পত্তির সুযোগও কমে আসে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট