ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন

জাতীয় সংগীত ও পতাকা অবমাননায় কোটি টাকা জরিমানা, ১৪ বছরের জেল

জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত অবমাননা প্রস্তাবিত ডিজিটাল আইনে অপরাধ হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এই অপরাধে কোটি টাকা জরিমানা ও ১৪ বছরের কারাদণ্ডের বিধান হচ্ছে। এই নতুন বিধান যুক্তসহ অন্যান্য আরও কিছু সংশোধনী এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রিপোর্ট চূড়ান্ত করে এনেছে সংসদীয় কমিটি। সংসদের আগামী অধিবেশনেই এই আইনটি পাস হবে। তবে, ডিজিটাল আইনে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সব প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না বলে জানা গেছে।

গত বুধবার (২৫ জুলাই) সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ডাক, তার ও টেলিযোগাযোগ সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির মুলতবি (৩য় মুলতবি বৈঠক) বৈঠকে প্রস্তাবিত আইনের কয়েকটি ধারায় সংশোধনীর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ধারাগুলো হলো ৩, ৫, ১২, ২১, ও ৫৩।

এর আগে সংসদীয় কমিটি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করে। ওই বৈঠকে আইনে আরও কিছু ধারা সংশোধনীর সিদ্ধান্ত আসে। সবগুলো সংশোধনী এখন একত্রিত করে কমিটি বিলের প্রতিবেদন চূড়ান্ত করে। সংসদের আসন্ন অধিবেশনের প্রথম বৈঠকেই রিপোর্ট উপস্থাপন করবে। কমিটি মনে করলে এর আগে আরেক দফা বৈঠক করে প্রতিবেদনটি চূড়ান্ত করবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আগামী বৈঠকের প্রথমদিনেই বিলের প্রতিবেদন দিতে হবে। না হলে আরও সময় নিতে হবে। আমরা ওইদিনই প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করতে চাই।’

সংসদীয় কমিটি বিলে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত অবমাননাকে আইনের এখতিয়ারভুক্ত করেছে বলেও গণমাধ্যমকে জানান কমিটির সভাপতি।

সংসদে উত্থাপিত বিলের ২১ ধারায় মুক্তিযুদ্ধ বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বা জাতির পিতার বিরুদ্ধে কোন ধরনের প্রপাগান্ডা প্রতরণার দণ্ডের বিধান রয়েছে। এর সঙ্গে কমিটি জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতও সন্নিবেশ করছে। বিলে এই অপরাধে কোটি টাকা জরিমানা ও ১৪ বছরের জেলের বিধানের প্রস্তাব রয়েছে।

এছাড়া সংসদীয় কমিটি বিলের একজন মহাপরিচালকের নেতৃত্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা এজেন্সি গঠন করার কথা বলা হয়েছে। সেখানে নতুন করে দুই জন পরিচালক যুক্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ১২ ধারায় ১১ সদস্য বিশিষ্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা কাউন্সিল গঠনের যে বিধান রয়েছে, সেখানে বিএফইউজের একজন প্রতিনিধি যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। আর মামলা নিষ্পত্তি ১৮০ দিনের স্থলে ১৮০ কার্যদিবস ও ওই সময় নিষ্পিত্তি না হলে নতুন করে ৯০ দিনের যে বিধান রয়েছে, সেটাকে ৯০ কার্যদিবস করার কথা বলা হয়েছে।

জানা গেছে, জিডিটাল আইনে গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে যেসব দাবি আপত্তি তোলা হয়েছিল তার কয়েকটি কমিটি বিবেচনায় নেয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আমরা তাদের দাবির মধ্যে যেগুলো যৌক্তিক মনে করেছি, তা বিবেচনায় নিয়েছি। অযৌক্তিক কোনও কিছু তো বিবেচনা করা যবে না। আর আমরা তো কোনও ব্যক্তির স্বার্থে আইনটি করছি না যে, সবকিছুই বিচেনায় নিতে হবে। দেশ ও জাতির স্বার্থ আমাদের সবার আগে দেখতে হবে।’

সংশোধনীতে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছেন কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইমরান আহমেদ বলেন, ‘তাদের চহিদা মোতাবেক যতটা সম্ভব অ্যাডজাস্ট করেছি। তাদের সন্তুষ্ট করার জন্য তো আমরা সব কিছু বিষর্জন দিতে পারি না। তবে এটা বলতে পারি, তাদের সঙ্গে আলোচনা করে আইনটিতে আমরা সুন্দর করতে পেরেছি।’ সংসদীয় কমিটি গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে নতুন করে আর বসবে না বলে কমিটির সভাপতি জানান।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে মোর অর লেস যতটা সম্ভব আমরা অ্যাডজাস্ট করেছি।’

একইসঙ্গে আগামী অধিবেশনেই এই আইনটি পাস করে বলে মন্ত্রী গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন।

প্রসঙ্গত, আগামী সেপ্টেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে চলতি দশম সংসদের ২২তম অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এটিই হবে দশম সংসদের শেষ অধিবেশন।

কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া বিশেষ আমন্ত্রণে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার ও আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বৈঠকে অংশ নেন।