অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের নিয়ে দেশের ৬৪টি জেলায় মাদকবিরোধী বিশেষ আদালত গঠনের সুপারিশ করেছেন র্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ। তিনি বলেন, সময় এসেছে এসব বন্দিদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোনো দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোনো জায়গায় সে জেল হতে পারে।
আজ রোববার (২৯ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত মাদকবিরোধী ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ বাস্তবায়নবিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, দেশের নিম্ন আদালতে বর্তমানে ৩০ লাখ মামলা পেন্ডিং আছে। অনেক আসামি ধরা হয় কিন্তু মামলার জট ও দীর্ঘসূত্রিতার কারণে বাদী সাক্ষী না পাওয়ায় পার পেয়ে যায়। আমি দেশের ৬৪ জেলায় শুধুমাত্র মাদক-সংক্রান্ত আসামিদের বিচারের জন্য একটি আলাদা আদালতের সুপারিশ করছি। সেটা ৫-৬ বছরের জন্যই হোক না কেন। এ সময় তার পাশেই বসা ছিলেন সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ।
বেনজির আহমেদ বলেন, অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে প্রতি জেলায় একটা করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট বিশেষ আদালত করা যেতে পারে। কারণ আমাদের ম্যাজিস্ট্রেটের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৮০০। বিশেষ আদালতের জন্য নতুন করে নিয়োগ দিতে হলে অনেক দীর্ঘসূত্রিতা দেখা যাবে। আমি বলব বিশেষ আদালত করে তাদের বিচার করা হোক। বিচারে আসামি খালাস পাক, তারপরও বিচারটা হোক।
দেশের ৩৬ হাজার বন্দির ধারণ ক্ষমতার জেলখানায় ৯০ হাজার বন্দী রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বন্দিদের ৪৪ শতাংশই মাদক মামলার। তার মানে জেলখানার ধারণ ক্ষমতার সমপরিমাণ বন্দী মাদক সংশ্লিষ্টতায়। সময় এসেছে এসব বন্দিদের জন্য বিশেষ জেল করার। বঙ্গোপসাগরের কোনো দ্বীপ বা বিচ্ছিন্ন কোনো জায়গায় সে জেল হতে পারে। দয়া করে এটা করে দিন, যাতে মাদক মামলার আসামিদের আলাদা করতে পারি। এতে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থাটাও সহজ হবে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের অ্যাকশন প্ল্যানে চাকরিতে প্রবেশের সময় ডোপ টেস্ট করানো সিদ্ধান্তের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই ভালো খবর। পৃথিবীর কোন দেশই মাদকমুক্ত নয়, তবে এটা সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। মাদকের বিরুদ্ধে এটা আমাদের সর্বাত্মক যুদ্ধ, যে যুদ্ধে বিজয়ী হয়েই আমরা ঘরে ফিরব। আমি চাই ডোপ টেস্ট শুধু চাকরির ক্ষেত্রে নয়, এটা রেনডমলি (সবার ক্ষেত্রে) চালু হোক।
মাদক আইনে পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, মাদকে একমাত্র শাস্তি হতে হবে মৃত্যুদণ্ড। মাদক বিক্রয়, সেবন সবক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ সাজার বিধান থাকতে হবে মৃত্যুদণ্ড।
মাদকবিরোধী অভিযানের সমালোচকদের ওপর ক্ষোভ ঝেড়ে বেনজীর আহমেদ বলেন, কোনোকিছু শুরু করলে একশ্রেণির মানুষ চিৎকার শুরু করেন। তারা আসলে কি পেতে চায়? জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময়ও দেখেছি তারা রাতের পর রাত টেলিভিশনে বসে চিৎকার করছেন। তাদের মধ্য থেকে কলোনিজমের ক্ষতটা শুকায়নি। তারা অন্যের সুরে সুর মেলান, পুতুলনাচের মতো অন্যের ইসারায় নাচতে থাকেন। তাদের বলব এই কলোনিজম মনোনিবেশ থেকে বেরিয়ে আসেন। তারা কি মনে করেন, আমরা কিছু বুঝি না? চিৎকার করে লাভ নেই এ যুদ্ধে আমরা বিজয়ী না হয়ে ঘরে ফিরব না। এটা ১৬ কোটি মানুষের ডিমান্ড, সরকার ও রাষ্ট্রের ডিমান্ড। প্রত্যেককে সঙ্গে নিয়ে যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়েই ঘরে ফিরব। বাংলাদেশের মানুষ ন্যায়ের পক্ষে যুদ্ধ করে প্রতিবারই জয়ী হয়ে ফিরেছে। এ দেশে ইয়াবা ব্যবসার জন্য তো স্বাধীনতা যুদ্ধে ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হননি।