রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুতে দ্রুত বিচার ও অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
গত রোববার (২৯ জুলাই) জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের পাল্লাপাল্লিতে রাজধানীর শহীদ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এঘটনার পর দোষীদের বিচার দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ করছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সড়ক পরিবহন আইনটি দ্রুত মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। বুধবার (০১ আগস্ট) আইনটির ভেটিং সাপেক্ষে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠায় আইন মন্ত্রণালয়।
আইন সম্পর্কে দুপুরে নিজ দফতরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, কিছুদিন ধরে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেক রকমভাবে সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে। আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখার চেষ্টা করেছি, যেসব কারণে রাস্তার কারণে, গাড়ির কারণে, মানুষ চলাচলের কারণে- এসব কারণে দুর্ঘটনা হতে পারে। সেগুলোর ব্যাপারে পর্যাপ্ত প্রভিশন করা হয়েছে কিনা, সেগুলো যাতে না ঘটে সেই রকম পর্যাপ্ত প্রভিশন এর মধ্যে আছে কিনা এবং সেইখানে কোনো আইনের ফাঁক-ফোঁকর আছে কিনা- সেসব দেখে কাকতালীয়ভাবে এটাও প্রস্তুত হয়েছে, আর এরকম একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে।
মন্ত্রী বলেন, আমি অত্যন্ত পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই আইনটা অত্যন্ত আধুনিক। কারণ অনেক বিষয় আছে যেগুলো কোনোদিনই আমাদের অ্যাড্রেস হয় নাই। যেমন ধরেন, বিদেশে চালকদের ভুল যদি হয় তাহলে একবারেই তাকে জেল-হাজত বা ওখানে যে রকম আছে পয়েন্ট, এখানেও ১২ পয়েন্ট রাখা আছে এবং অপরাধের সঙ্গে সেই পয়েন্ট কাটা যাবে। যদি তার ১২ পয়েন্ট কেটে যায় তাহলে সে আর কোনোদিন ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবে না। ৩ পয়েন্ট কাটলে কী হবে- এরকম একটা বিধান করে দেওয়া হয়েছে।
শাস্তির ব্যাপারে মন্ত্রী বলেন, আমাদের সবসময় দেখতে হয় অল্প অপরাধে বেশি শাস্তি হয়ে না যায়, আবার বেশি অপরাধে কম শাস্তি না হয়। সেগুলো অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে সুবিন্যাস করা হয়েছে। বিচারের তাৎক্ষণিকতা বা তড়িৎ বিচারের ব্যবস্থা এই আইনের মধ্যে করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আইনটা মন্ত্রিসভার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপিত হবে, প্রধানমন্ত্রী চান এটা তড়িৎ উপস্থাপিত হোক। সেইক্ষেত্রে আমার মনে হয় এই আইনটা যদি অনুমোদিত ও সংসদে পাস হয় তাহলে আমার ধারণা সব স্টেকহোল্ডার ন্যায়বিচার পাবেন।
‘এখন কেউ যদি মনে করেন যে মানুষ মেরে তারা কম শাস্তি নিয়ে চলে যেতে পারবেন, এটা তো হয় না। আবার এটাও ঠিক একজনের ভুলের জন্য সবাইকে দায়ী করাও ঠিক না। যে ভুল করেছে তার বিচার করা উচিত। যে ভুল করেছে তার বিচার করা উচিত, কিন্তু সম্প্রদায়কে দায়ী করা ঠিক হবে না।’
সেগুলো বিচার-বিবেচনা করে আমার মনে হয় এই আইনটা যথপোযোগী এবং সবকিছু অত্যন্ত পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে দেখে আইনটি পাঠিয়েছি, বলেন আইনমন্ত্রী।
তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু হলে যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে সেটা পর্যাপ্ত। রমিজ উদ্দিনের কলেজের হতভাগ্য ছাত্র-ছাত্রী নিহত হয়েছে, তাদের বিচার যেমন তড়িৎ হওয়া উচিত, সেই রকম সব দুর্ঘটনার বিচার তড়িৎ হওয়া উচিত। আর একটা জিনিস, যারা দোষী তাদেরই কেবল শাস্তি দেওয়া উচিত। পুরো সম্প্রদায়কে ভিক্টিমাইজ করেন না, যে এটা করেছে তাকে নিশ্চয়ই শাস্তি দেওয়া হবে।
বিচার প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, আমি আপনাদের কথা দিতে পারি, যে মুহূর্তে তদন্ত শেষে এই মামলা আদালতে গড়াবে আমি প্রসিকিউশনকে বলে এটার তড়িৎ বিচারের ব্যবস্থা করবো। যারা অপরাধ করেছে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে। আইনে এ-টু-জেড সব বিষয় যুক্ত আছে বলে জানান মন্ত্রী। আইন হলে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে।