আজ রোববার (৫ আগস্ট) থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে ট্রাফিক সপ্তাহ। এ অভিযানে স্কাউট সদস্যরা ছাড়াও পুলিশের কাজে সহায়তা করতে পারবে ছাত্রছাত্রীরাও।
ঢাকার সড়কে ৭ম দিনের মতো অবস্থান নিয়ে শিক্ষার্থীদের গাড়ির কাগজপত্র পরীক্ষার মধ্যে গতকাল শনিবার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অডিটরিয়ামে এক সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানান ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
তিনি নিরাপদ সড়কের আন্দোলন থেকে ‘সাহস’ নিয়ে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশ ‘কঠোর’ হচ্ছে জানিয়ে শিক্ষার্থীদের এখন ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ট্রাফিক সপ্তাহে লাইন্সেস ছাড়া ফিটনেসবিহীন গাড়ি, হেল্পার দিয়ে ড্রাইভিংসহ ট্রাফিক আইনের যে কোনো ব্যত্যয় হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা। একইসঙ্গে মোটরসাইকেলে ৩ জন চড়া, ট্রাফিক সিগন্যাল ভায়োলেশন করা, উল্টো পথে চলার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা, সড়কে চালকের ও গাড়ির ‘লাইসেন্স পরীক্ষায়’ পুলিশের কাজে নেমে যায় তারা। তাদের ‘পরীক্ষায়’ অনেক পুলিশ কর্মকর্তা ছাড়াও মন্ত্রী-এমপিরাও আটকা পড়েন।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা স্বীকার করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ৯টি দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হলেও তারা রাজপথ ছাড়েনি।
সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপি কমিশনার বলেন, সাধারণ ছাত্রদের আমরা স্যালুট করি। যে কাজটি আমাদের আরো আগে করার কথা ছিল, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে আমরা তা পারিনি। আজকে শিক্ষার্থীরা আমাদের নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা আমাদের প্রতিপক্ষ নয়, তারা আমাদের পরিপূরক। ভবিষ্যতে অনিয়ম নিয়ন্ত্রণ করে ট্রাফিক আইন বাস্তবায়ন করতে আমরা নৈতিক ভিত্তি পেয়েছি, আইন প্রয়োগ করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সাহস পেয়েছি।
ট্রাফিক আইন যুগোপযোগী করার জন্য ‘গণপরিবহন ও ট্রাফিক আইন’ নামে নতুন একটি আইন সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলেও শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ মহৎ। তাদের আমরা নৈতিকভাবে সমর্থনও করি। কিন্তু আমাদের কাছে গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে, ছাত্রদের এই এচিভমেন্টকে পলিটিসাইজ করার চেষ্টা হচ্ছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজধানীর শনির আখড়ায় দুই ছাত্রের ওপর পিকআপ ভ্যান তুলে দেয়া হয়েছে। তোলারাম কলেজের এক ছাত্রকে গাড়িচাপা দেয়া হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছাত্রছাত্রীরা আমাদের একটি নৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। যে কাজটি আমাদের আরো আগে করা উচিত ছিল কিন্তু আমরা তা পারিনি। তাদের এই অন্দোলনের ফলে আমাদের নৈতিক ভিত্তি শক্ত হয়েছে, আমরা সাহস পেয়েছি।
ডিএমপি কমিশনার বলেন, আমাদের ট্রাফিক অব্যবস্থাপনা দীর্ঘদিনের। এজন্য বহুবিধ কারণও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কারণ আমাদের ভৌত অবকাঠামো। তবে এত সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিছু ক্ষেত্রে আমরা সফলতাও পাচ্ছি।
আজ থেকে শুরু হতে যাওয়া ট্রাফিক সপ্তাহের কথা উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, দেশব্যাপী চলবে এই অভিযান। ট্রাফিক আইনের ব্যত্যয় ঘটলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ করে বলেন, তাদের একটি আস্থার জায়গা দরকার। ট্রাফিক সপ্তাহের ফলাফল তারা দেখুক। ছাত্রদের মনের ভাষাকে আমরা বুঝতে পেরেছি। তাদের স্পিরিটকে আমরা ধারণ করতে পেরেছি। এক প্রশ্নের উত্তরে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ছাত্রছাত্রীরাও ইচ্ছে করলে আমাদের এই কাজে সহায়তা করতে পারবে।
রাস্তায় শিক্ষার্থীদের যানবাহনের লাইসেন্স পরীক্ষা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এর একটি যেমন ভালো দিক আছে, তেমনি নেতিবাচক দিকও আছে। মানুষ রাস্তায় নামতে ভয় পাচ্ছে। পরিবহন মালিকরা যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। কারো জন্যই এই অব্যবস্থাপনা সুখকর নয়।
বিশৃঙ্খলা পরিহার করে সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে সবার কাছে তিনি নৈতিক সমর্থন চান তিনি।