বিশেষ নাগরিক অধিকার রক্ষায় প্রচলিত একটি আইন শীর্ষ আদালতে বাতিলের আশঙ্কায় উত্তাল হয়ে উঠেছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর। আইনটি বাতিল হলেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংবিধানের ৩৫এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকেন কাশ্মীরের মানুষ। ১৯৫৪ সালে এই অনুচ্ছেদটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এসব সুবিধা বাতিলের দাবি করে ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি মামলা করে উই দ্যা সিটিজেন্স নামে একটি সংগঠন।
আজ সোমবার (৬ আগস্ট) সেই মামলারই শুনানি হওয়ার কথা প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রের নেতৃত্বাধীন ৩ সদস্যের একটি বেঞ্চে। বেঞ্চের অন্য দুই বিচারপতি হলেন এ এম খানওয়ালিকর ও বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫এ আইনে স্থায়ী বাসিন্দাদের সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং তাদের বিশেষ অধিকার ও সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এতে রাজ্যের বাসিন্দা ছাড়া কেউ সম্পত্তি ক্রয় এবং সরকারি চাকরিতে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাশপাশি কাশ্মীরের কোনও মহিলা রাজ্যের বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তিনি বাবার সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হন।
সুপ্রিম কোর্টে এই আইন বাতিলের জন্য একটি আপিলের পর এই উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এদিকে কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ৫ আগস্ট থেকে দু’দিনের ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। খবর আলজাজিরার।
কাশ্মীরের বিশেষ নাগরিক অধিকার রক্ষায় প্রচলিত আইনটি বাতিল হলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে। জম্মু-কাশ্মীরের রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ ও বাসিন্দারা এই আইন বাতিল হলে প্রতিবাদ ও বড় ধরনের আন্দোলনের হুমকি দিয়ে রেখেছেন। কাশ্মীরের ব্যবসায়ীদের জোট ইকোনমিক অ্যালায়েন্সের প্রধান ইয়াসিন খান বলেন, আমরা এক সপ্তাহ ধরে প্রতিবাদ করছি। কাশ্মীরের ভৌগোলিক চরিত্র পাল্টানোর কোনো ধরনের পদক্ষেপ ও ফিলিস্তিনের মতো করার চেষ্টা কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।
হিন্দু জাতীয়তাবাদীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত উই দ্য সিটিজেন নামের একটি এনজিও আদালতে আইন বাতিলের এই আহ্বান জানিয়েছে। তাদের দাবি, আইনটি অতিমাত্রায় বৈষম্যমূলক। ফলে তা অসাংবিধানিক ঘোষণা করার দাবি করে তারা। এনজিওটি আদালতের আবেদনে আরও জানিয়েছে, আইনটি ভারতের অখ তার বিরোধী এবং ভারতীয় নাগরিকদের মধ্যে বিশেষ শ্রেণি তৈরি করছে।
কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলো যাদের কেউ পাকিস্তানের সঙ্গে একত্রিত হতে চায়, আবার কেউ স্বাধীন রাষ্ট্র চায়, তারা ৫ আগস্ট থেকে দুই দিনের ধর্মঘট ডেকেছে। তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, যদি আইনটি বাতিল করা হয়, তাহলে গণবিক্ষোভ শুরু হবে। তিন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সৈয়দ আলি গিলানি, মিরওয়াইজ উমর ফারুক ও মোহাম্মদ ইয়াসিন মালিকের জোট জয়েন্ট রেজিস্ট্যান্স লিডারশিপ জানিয়েছে, ভারত সরকারকে স্পষ্ট করে বলতে চাই, জনগণের স্বার্থ রক্ষায় আমরা জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি।
কাশ্মীরি আইনজীবীদের হয়ে আদালতে লড়বেন আইনজীবী জাফর শাহ। তিনি বলেন, বিতর্কিত অঞ্চলে রাজনৈতিক ইস্যু বজায় রাখার জন্য এই আইনটি বহাল থাকা জরুরি। এই আইনটিই কাশ্মীরের পরিচয় এবং সংবিধানের এই ধারাটিই চারটি অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়। আইনে কোনো পরিবর্তন হলে এসব অধিকার হারাবে কাশ্মীরিরা।
এই আইনটি প্রণয়ন করেছিলেন কাশ্মীরের শেষ রাজা মহারাজ হরি সিং। ১৯২৭ সাল থেকে এই আইন জারি আছে। পরে স্বাধীনতার পর তা ভারতীয় সংবিধানে যুক্ত করা হয় এবং ১৯৫৪ সালে তা গৃহীত হয়। তবে ভারতের ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) কাশ্মীরিদের আশঙ্কা ও ভয়ের কথা উড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্যটির বিজেপি সাধারণ সম্পাদক অশোক কৌল বলেন, যারা সমালোচনা করছে তারা মানুষকে বোকা বানাচ্ছে। কেউ চাকরি হারাবে না। বিষয়টি এখন আদালতের কাছে। আদালত যে রায় দেবেন তা আমরা মেনে নেব।
ভারত ও পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে তিনবার যুদ্ধে জড়িয়েছিল। গত ২০ বছরের সহিংসতায় কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে যাদের বেশিরভাগ বেসামরিক নাগরিক। এই আইন বাতিলের ইস্যুকে কেন্দ্র করে কাশ্মীরের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও গোষ্ঠী একত্রিত হয়েছে। এই সপ্তাহের শুরুতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, পরিবহন সমিতি ও ফল উৎপাদকদের ২৭টি সংগঠনের প্রতিনিধিরা আইনটি বহাল রাখার অঙ্গীকার করেছেন। তারা বলেছেন, আইনটি জম্মু-কাশ্মীরের জনগণের জন্য জীবন-মরণের বিষয়। আইনটি রক্ষায় আমরা রক্ত দিতেও প্রস্তুত।