পরকীয়া অপরাধ নাকি সামাজিক সমস্যা? এমন প্রশ্ন তুলেছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। বিবাহ বহির্ভূত শারীরিক সম্পর্ক ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী পরকীয়া একটি অপরাধ এবং যে পুরুষ এ ধরনের সম্পর্কে যুক্ত থাকবেন বলে আদালতে প্রমাণিত হবে, তার সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের ব্যবস্থা রয়েছে দণ্ডবিধিতে।
কিন্তু প্রায় দেড়শ বছর আগে দণ্ডবিধিতে যুক্ত হওয়া ওই ধারার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে ভারতের সর্বোচ্চ আদালত। খবর বিবিসি বাংলার।
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্ত নারায়ণ চ্যাটার্জী বিবিসিকে বলেন, দেড়শ বছর আগে যেভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ককে দেখা হতো, সেটা তো এখন হয় না। নারী-পুরুষ উভয়েই একসঙ্গে কাজ করেন, হয়তো অফিসের প্রয়োজনে বাইরেও যান এক সাথে। তাই মেলামেশার ধরন যেমন পাল্টেছে, তেমনই বদল এসেছে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিতেও। পরকীয়া শব্দটাকে আগে যেভাবে দেখা হতো, এখন আমরা নিশ্চয়ই সেভাবে দেখি না। অন্যদিকে পরিবার, সমাজ-এগুলোকেও রক্ষা করার প্রয়োজন। তাই দেড়শ বছরের পুরনো আইনের এই ধারার সংস্কার প্রয়োজন।
ভারতের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের এক বেঞ্চ বুধবার পরকীয়া প্রেম নিয়ে কোনও চূড়ান্ত নির্দেশ না দিলেও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
কেরালার এক বাসিন্দা কোর্টের কাছে আবেদন করেছিলেন, ৪৯৭ নম্বর ধারাটি দণ্ডবিধি থেকে বাতিল করা হোক। সেই মামলার শুনানিতেই আদালত প্রশ্ন তোলে একটি সম্পর্কে দুজন জড়িত হলেও তাদের মধ্যে পুরুষ মানুষটির সাজা হবে, আর নারীর সাজা হবে না, এটা অনুচিত।
কলকাতা হাইকোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী ভারতী মুৎসুদ্দি বিবিসিকে বলেন, প্রশ্নটা অনেকদিন থেকেই উঠেছে, বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত পুরুষটির সাজা হবে অথচ নারীটির কোনও সাজা হবে না কেন? যে নারী তার স্বেচ্ছাচারের ফলে অন্য এক নারীর সংসার ভাঙ্গছেন, সেটা তো অমার্জনীয় অপরাধ। পুরুষটির যেমন সাজা দেওয়ার বিধান রয়েছে, এরকম সম্পর্কে জড়িত নারীটিরও শাস্তি হওয়া উচিত বলেই আমি মনে করি।
ভারতের নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপক শাশ্বতী ঘোষ বলেন, যদি কোনও বিবাহিতা নারী নতুন করে কোনও সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তার দায়-দায়িত্ব পুরুষ মানুষটির যেমন, তেমনই ওই নারীরও। সেই দায়িত্ব তো নারীটিকে নিতেই হবে। সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লাম, তার ফল ভোগ করলাম, কিন্তু দোষী হল শুধু পুরুষটির, সেটা তো ঠিক নয়। এই ধারাটিতে শুধু বিবাহিত নারীদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার প্রসঙ্গ থাকবে কেন? কোনও পুরুষ তো অবিবাহিত নারী বা বিধবা নারীর সঙ্গেও সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারেন, সে ক্ষেত্রে আইনে কেন কিছু বলা থাকবে না?
এই মামলাটির শুনানি চলাকালীন ভারত সরকার জানিয়েছিল, ৪৯৭ ধারাটি তুলে দেওয়া হলে বিয়ে এবং পরিবার নামের যে ব্যবস্থা সমাজকে ধরে রেখেছে, তা ধ্বংস হয়ে যাবে।
শাশ্বতী ঘোষ আরও বলেন, সম্পর্কে নৈতিকতা থাকা দরকার। কিন্তু সবসময়ে কি তাকে আইন দিয়ে বেঁধে রাখা যায়? পরকীয়া প্রেম কি আদৌ অপরাধ হতে পারে? আমার তো মনে হয় না। মন দেওয়া নেওয়া যে কোনও নারী পুরুষের মধ্যেই হতে পারে-তিনি বিবাহিত অথবা অবিবাহিত যাই হোন না কেন। সেটাকে ক্রিমিনালাইজ করা কখনই উচিত নয়।