সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাকে নিয়ে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম জানা আছে বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরাতে ড. কামাল হোসেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার সঙ্গে জুডিশিয়াল ক্যু’তে জড়িত ছিলেন।’
জাতীয় শোক দিবস (১৫ আগস্ট) উপলক্ষে বুধবার (৮ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘শেখ হাসিনা তো বাংলাদেশের উন্নয়ন করেই ফেলছেন। এখন কী করার? প্রথম ষড়যন্ত্র হলো একটি জুডিশিয়াল ক্যু (বিচারিক অভ্যুত্থান) করে শেখ হাসিনাকে কী করে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে সরানো যায়, সেই চেষ্টা করা। আপনারা দেখেছেন, প্রথমে শ্রীলঙ্কায় রাজাপাকশে যখন তার প্রধান বিচারপতিকে নামিয়ে দিয়েছিলেন, তখন রাজাপাকশেকেও নেমে যেতে হয়েছে। এরপর পাকিস্তানের নওয়াজ শরীফকে নামিয়ে দিয়েছেন তার প্রধান বিচারপতি। তারপরে নেপালে। এরপর আমাদের সাবেক বিচারপতি এসকে সিনহাকে নিয়ে যারা ষড়যন্ত্র করেছে, তাদের সবার নাম কিন্তু আমরা জানি।’
এ সময় উপস্থিত অতিথিরা ষড়যন্ত্রকারীর নাম জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা তাদের তো চিনবেনই। ড. কামাল হোসেনকে আপনারা চেনেন না? তারপর এই ষড়যন্ত যখন বিফলে গেছে, আমি জানি আমাকে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিটিং জাজেরা বলেছেন, তারা (জাজেরা) একটি অনুষ্ঠানের জন্য ড. কামাল হোসেনকে ডাকতে গিয়েছিলেন। তখন তিনি (ড. কামাল হোসেন) তাদের সিনহার (এসকে সিনহা) ব্যাপারে বকাঝকা করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন সিনহার ব্যাপারে তারা (জাজরা) প্রতিবাদ করেননি, কেন সিনহাকে তারা সরিয়েছেন?’
কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারপরে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের কথা যেই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শুনেছেন, তিনি বলেছেন, ঠিক আছে। কোটার ব্যাপারে যদি এ রকম কিছু হয়ে থাকে, তাহলে আমি নিশ্চয় দেখবো। দরকার হলে কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করে দেবো। তারপর তো আন্দোলনের কোনও প্রয়োজন হয় না। এই আন্দোলন যেন চলমান থাকে, এই আন্দোলনের ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করা যায়, সেজন্য এই কামাল হোসেন, এই ইউনুছ (ড. মুহাম্মদ ইউনুছ), এই খালেদা জিয়ার যারা সহযোগী, তারা এটার মধ্যে নাক গলানো শুরু করেন।’
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের ডাকা আন্দোলন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘তারপর সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে। ছাত্ররা রাস্তায় নেমেছে। তাদের যৌক্তিক দাবি কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মেনে নিয়েছেন। বলেছেন, ঠিক আছে, সব ঠিক করে দেবো। তারাও ফিরে যেতে চেয়েছে এবং তারা ফিরে গেছে। এর মধ্যেও একটা ষড়যন্ত্র শুরু হলো—সরকারকে ফেলে দিতে হবে।’
আনিসুল হক বলেন, ‘এগুলো কিসের আলামত? এগুলো হচ্ছে, তারা কোনও একটা পেছনের দরজা দিয়ে যেন ক্ষমতায় আসতে পারেন, যেন আবারও যে উন্নয়নের পথে, যে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশকে পরিচিতি করা হয়েছে, সেটাকে আবারও সেই জায়গা থেকে ফেলে দিতে হবে। পাকিস্তানের নিচে নামাতে হবে।’
বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এক বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে আনিসুল হক বলেন, ‘মওদুদ সাহেব বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশের দরকার নাই, আমাদের সেইভ বাংলাদেশ দরকার। তাদের সেইভ বাংলাদেশের নমুনা হলো—হত্যার বিচার হবে না, আর ক্যান্টনমেন্টে প্রত্যেক শুক্রবার হত্যাযজ্ঞ চলবে। এটা হচ্ছে তাদের সেইভ বাংলাদেশ। আর ডিজিটাল বাংলাদেশ হলে পাকিস্তান থেকে উন্নত হয়ে যাবে বাংলাদেশ। তাহলে তো তাদের ঘুম হবে না। এটা হচ্ছে তাদের নিয়ম-নীতি।’
এ সময় বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে বিভিন্ন বাধার সম্মুখীন হওয়ার প্রসঙ্গ টেনে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল একাত্তরের পরাজিত গোষ্ঠী রাজাকার, আল বদরেরা। কিন্তু সেটা কি ঠিক? ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। ইতিহাস বলে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল এই আওয়ামী লীগেরই কিছু কুচক্রী নেতা। তার মানে মীর জাফর আমাদের মধ্যে ছিল। সেই মীর জাফর যদি আমাদের মধ্যে না থাকতো, তাহলে একাত্তরের পরাজিত শক্তি বঙ্গবন্ধুর গায়ে হাত দেওয়ার সাহস পেতো না।’
এ সময় দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে আরও শক্তিশালী করতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার শপথ নিতে আহ্বান জানান।
পরিষদের সদস্য সচিব ফজলে নূর তাপসের সঞ্চালনা ও পরিষদের আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারয়ার অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন, আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম, সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দুল মতিন খসরু, সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ রেজাউর রহমান, আব্দুল বাসেত মজুমদার, নজিবুল্লাহ হিরু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল প্রমুখ।