সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে শাহবাগ থানায় মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকালে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট অ্যালায়েন্সের (বিএনএ) চেয়ারম্যান ও বিএনপি সরকারের সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মামলা দায়েরের পর বেরিয়ে আরো চাঞ্চল্যকর তথ্য। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক প্রধান বিচারপতি তাঁর খাস কামরায় ডেকে নাজমুল হুদার কাছে ঘুষ দাবি করেছিলেন। মামলা থেকে মুক্তি দিতে এ ঘুষ চাওয়া হয়। পরে ঘুষ না দেওয়ায় হুদার একটি মামলার রায় পাল্টে দিয়ে আগের রায়ের বিপরীত রায় দেন।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এসকে সিনহা) তার খাস কামরায় ডেকে ঘুষ চেয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন তৃণমূল বিএনপির সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। নাজমুল হুদা বলেন, ‘২০১৭ সালের কোনও একসময় এসকে সিনহা আমরা ঘুষ চেয়েছেন। তারিখটি আমার মামলার এজাহারে লেখা আছে। এই মুহূর্তে তারিখ কথা মনে পড়ছে না। একটি মামলা থেকে খালাস দেওয়ার জন্য ২ কোটি টাকা এবং আমার ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি রিলিজ আবেদনের বিপরীতে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ঘুষ চেয়েছিলেন তিনি।’
কেন ঘুষ চেয়েছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমরা নামে যেসব মামলা আছে, সেগুলো থেকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ঘুষ চেয়েছিলেন। আর ঘুষ না দিলে যে মামলা থেকে আমি অব্যাহতি পেয়েছি, সেগুলো পুনরায় শুনানি করা হবে। এই ধরনের হুমকি দিয়েছিলেন এসকে সিনহা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি ঘুষ দিতে রাজি না হওয়ায় আমরা মামলা নিয়ে অনেক উল্টা-পাল্টা করেছেন এসকে সিনহা। একটি মামলার রায় সম্পূর্ণভাবে ডিকলেয়ার করেছিলেন। পরে সেই রায় সম্পূর্ণভাবে পরিবর্তন করে আগের রায়ের বিপরীত রায় দিয়েছিলেন।’
ঘুষ চাওয়ার অভিযোগে এসকে সিনহার বিরুদ্ধে কবে মামলা করেছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হুদা বলেন, ‘গত ২৭ সেপ্টেম্বর এই মামলা করেছি।’
ঘুষ চাওয়ার এতপরে কেন মামলা করেছেন, জানতে চাইলে নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে এসব বিষয় নিয়ে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাই এখন মামলা করেছি।’
তবে তিনি সিনহাকে কোনও ঘুষ দেননি বলেও এসময় দাবি করেন।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের তদন্ত ও আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ হওয়ায় নাজমুল হুদার মামলাটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানান শাহবাগ থানার ওসি আবুল হাসান।
প্রসঙ্গত, যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বই প্রকাশের পর তুমুল আলোচনার মধ্যে তার ভাই অনন্ত কুমার সিনহার বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে বাড়ি কেনার একটি অভিযোগের বিষয়ে সোমবার সকালেই অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অভিযোগ আছে, যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সিতে ছোট ভাই অনন্ত কুমার সিনহার নামে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকার একটি বাড়ি কেনেন এস কে সিনহা। প্রায় চার হাজার স্কয়ার ফিটের বাড়িটির বাসিন্দা এস কে সিনহা নিজে। সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে খবর প্রকাশ হয়।