সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে নতুন তিনজন বিচারপতি নিয়োগ পেয়েছেন। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের কাছ থেকে আজ মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) তারা শপথ বাক্য পাঠ করেন।
নবনিযুক্ত তিন বিচারপতি হচ্ছেন- বিচারপতি জিনাত আরা, বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান। তাদের মধ্যে বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আরেক বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর সহদোর বড় ভাই।
শপথ অনুষ্ঠান শেষে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নম্বর এজলাস কক্ষে নতুন বিচারপতিদের সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিচারপতি জিনাত আরা বলেন, ‘বিচার বিভাগে মামলার জট একটি বড় সমস্যা। বিচারপতি ও বার (আইনজীবী সমিতি)-এর যৌথ প্রচেষ্টায় এই মামলা জট নিরসনে নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাবো।’
অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, আজকে বিচার বিভাগের জন্য স্বরণীয় দিন। সহোদর দুই ভাই বিচার অঙ্গনের সর্বোচ্চ আসনে আসীন হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে লালিত পরিবার থেকে দুই ভাই আপিল বিভাগের বিচারপতি হয়েছেন।
একই অনুষ্ঠানে বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ন বলেন, এটা অবশ্যই গৌরবের, এই প্রথম দুই ভাই একসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচরপতি হয়েছেন। ইতিহাসে এটাই প্রথম। জানা গেছে, সহোদর এই দুই ভাই সহোদর দুই বোনকেও বিয়ে করেছে। এ হিসেবে তারা ভায়রা ভাইও।
সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মুহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, দুই ভাইয়ের একসঙ্গে আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের নজির সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিশিষ্টজনদের বক্তব্য দেয়ার সময় বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সহধর্মিনী উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া সংর্বধনা অনুষ্ঠানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং উভয় বিভাগের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।
বিচারপতি জিনাত আরা
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, বিচারপতি জিনাত আরার বাবার নাম এ ই এম আর সিদ্দিকী (মৃত)। মায়ের নাম বেগম আয়শা সিদ্দিকী (মৃত)। ১৯৫৩ সালের ১৫ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন জিনাত আরা। বিএসসি ও এলএলবি পাসের পর ১৯৭৮ সালের ৩ নভেম্বর বিচার বিভাগে মুনসেফ হিসেবে যোগদান করেন তিনি। পরে ১৯৯৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। এরপর ২০০৩ সালের ২৭ এপ্রিল অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে অস্থায়ী ভিত্তিতে হাইকোর্টে নিয়োগ পান। ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন তিনি। এরপর মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) আপিল বিভাগের ইতিহাসে দ্বিতীয় নারী বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী
বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ২৯ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ও এলএলবি পাস করে ১৯৭৯ সালে কুষ্টিয়া বার অ্যাসোসিয়েশনে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ১৯৮০ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিসে মুন্সেফ হিসেবে যোগদান করেন তিনি। ১৯৯৭ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে পদোন্নতি পান। ২০০৯ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান এবং ২০১১ সালে হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন তিনি।
বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান
বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ১৯৫৬ সালের ১ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তিনি সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জ সাব ডিভিশনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি জেলা জজ আদালতের তালিকাভুক্ত আইনজীবী হন। ১৯৮৭ সালে তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালে তিনি হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১১ সালে তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হন।
প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনসহ চারজন বিচারপতি কর্মরত আছেন। প্রধান বিচারপতি ছাড়া বাকিরা হলেন- বিচারপতি ইমান আলী, হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও মির্জা হোসেইন হায়দার।
নতুন এ নিয়োগের ফলে আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৭ জনে উন্নীত হলো।