জেলখানাকে বাড়ি হিসেবে ধরলে তার মালিক কিন্তু জেলখানা কর্তৃপক্ষ। তাই স্বাভাবিক নিয়মেই তাদের কাছেই থাকে জেলখানার চাবি। কিন্তু হঠাৎ যদি শুনতে পাওয়া যায় জেলখানার চাবি থাকে সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের কাছে। তাহলে অবাক হওয়ারই কথা।
সম্প্রতি এমন ঘটনাই ঘটেছে ব্রাজিলের একটি জেলখানায়। যেখানে আসামিদের হাতেই রয়েছে নিজেদের সেলের চাবি।
ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ব্রাজিলের জেলের বন্দী সংখ্যা। এসব জেলকে কুখ্যাত বললেও কম বলা হবে। কারণ এখানে প্রায় বন্দীদের সংঘর্ষ লেগে থাকে। ২০১৭ সালে ব্রাজিলের জেলে দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের সংঘর্ষে ৫৬ জন প্রাণ হারিয়েছিলেন।
কিন্তু এখানকার একটি জেল একেবারই অন্যরকম। এই জেলের বন্দীদের কাছেই থাকে তাদের সেলের চাবি। এ ছাড়া রয়েছে বেসিক অ্যাডুকেশনের ব্যবস্থা। দেওয়া হচ্ছে বেশ কিছু প্রশিক্ষণ, যাতে মুক্তি পেলেই কাজ পেতে পারেন বন্দীরা।
ব্রাজিলের সংশোধনাগারের সঙ্গে যুক্ত একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তা ভালদেসি ফেরেইরা। ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রোটেকশন অব অ্যাসিস্ট্যান্স টু দ্য কনভিকটেড’ (এপিএসি) বেসরকারি সংস্থা যে জেলটি চালায় তারা অন্যরকম ভাবতে শুরু করে। ১৯৮০ সালে ব্রাজিলের একটি সংশোধনাগারে গিয়েই ভাবনাটি মাথায় এসেছিল ফেরেইরার। পরবর্তীতে তা বাস্তবায়িত করলেন তিনি।
ফেরেইরা বলেন, ‘চাবি আসলে বিশ্বাসের প্রতীক। তাই চাবি তুলে দেওয়া হয়েছে বন্দীদের হাতে।’
আপেকের পরিচালিত এই জেলে সংখ্যা নয়, নামে ডাকা হয় বন্দীদের। তাদের ডাকা হয় ‘রিকভারিং পার্সন’ হিসেবে। সেখানে নেই কোনো দ্বাররক্ষী কিংবা বন্দুক। শুধু ঘুমানোর সময় জেলের ঘরে ফেরেন তারা। বাকি সময় কাজ, পড়াশোনা বা নিজেদের শখ নিয়েই থাকেন বন্দীরা।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বলছেন, এই জেলের খরচ অন্য জেলের তুলনায় প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কম। এমনকি ইচ্ছামতো খেলাধুলা বা ধর্মাচরণের অধিকারও রয়েছে এখানকার বন্দীদের।
ফেরেইরা আরও বলেন, আপাকের উদ্দেশ্য হলো, ‘দ্য ম্যান এনটার্স, দ্য ক্রাইম স্টেস আউটসাইড।’ ব্রাজিলে এ রকম আরও ৫০টি জেল এভাবে চলা শুরু করেছে। আরও ১০০টি জেলকে এভাবে চালানোর প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।