তানজিম আল ইসলাম: কোনো বিরোধ নিষ্পত্তি বা আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়। কোনো কারণে, কোনো আইনি ঝামেলায় জড়ালে বা ঝামেলা থেকে মুক্তি পেতে আদালতে যেতে হয়। কিন্তু আদালতে যেতে হলে আগে থেকে কিছু প্রস্তুতি নেওয়া দরকার। আবার কোনো আদালতে, কীভাবে পদ্ধতি নিতে হবে—এ বিষয়েও প্রাথমিক ধারণা থাকা দরকার। এ ধারণা থাকলে অনেক ভোগান্তি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এড়ানো যায় জটিলতাগুলোও।
আইনজীবীর সঙ্গে পূর্বপরামর্শ
কোনো আইনি ঝামেলা বা মামলা হলে এ সম্পর্কে প্রথমে যা করা করা দরকার তা হলো, কোনো দক্ষ আইনজীবীর সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করা। এ জন্য যেটি খেয়াল রাখতে হবে, যে বিষয়ে প্রতিকার চাচ্ছেন বা যে বিষয় নিয়ে আদালতে যেতে হচ্ছে—এ বিষয়ে আইনজীবী অভিজ্ঞ কি না। অনেক আইনজীবী আছেন হয়তো শুধু জমিজমা নিয়ে কাজ করেন কিংবা এমন কেউ আছেন শুধু ফৌজদারি বিষয়-আশয় নিয়ে কাজ করেন, কেউবা কোম্পানি-ব্যাংকিং বিষয়ে। আবার অনেকেই আছেন, একাধিক বিষয় নিয়ে কাজ করেন। তাই আইনজীবী নির্ধারণ করাটা হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ। আইনজীবীর সঙ্গে সব বিষয়ে খোলাখুলি আলোচনা করা দরকার। কোনো বিষয়ে কোনো তথ্য গোপন রাখা উচিত নয়। মনে রাখতে হবে, আইনজীবী কিন্তু আপনি যে কাগজপত্র দেখাবেন এবং যা বলবেন তার ওপরই ভিত্তি করে মামলা লিখবেন। আর তিনি যে দলিলপত্র আনতে বলবেন, তা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দিতে হবে। আর মামলার ফি, অফিশিয়াল খরচ এবং আইনজীবীর ফি নিয়ে প্রথমেই ঠিকঠাক করে নেওয়া উচিত।
আদালতের তারিখ এবং করণীয় সম্পর্কে জানতে হবে
কোনো মামলায় বাদী বা বিবাদী হলে আদালতে হাজিরার তারিখ, নির্ধারিত তারিখে কয়টায় হাজির হতে হবে এবং সঙ্গে কী কী কাগজপত্র আনতে হবে—তা আইনজীবী কিংবা তাঁর জুনিয়রের কাছ থেকে জেনে নিতে হবে। এ ছাড়া আদালতে কিছু বলতে হবে কি না এবং বললে তা কী বলতে হবে—এ নিয়ে পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত। যদিও আইনজীবীই আপনাকে এ বিষয়ে বলে রাখবেন। যেভাবে মামলা লেখা হয়, সেভাবে সঠিক তথ্য আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। আদালতে সব দরখাস্ত বা হাজিরায় নিজের স্বাক্ষর যেন একরকম হয়, তা খেয়াল রাখতে হবে। কোনোভাবেই কোনো তথ্য গোপন করা যাবে না। কোনো জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া যাবে না। নিজে আগ বাড়িয়ে আদালতের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কোনো বিষয়ে আলোচনা করা উচিত নয়। এতে বিভ্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। মামলার পরবর্তী তারিখ সব সময় জেনে নিতে হবে আইনজীবীর কাছ থেকে। যদি জামিন জিম্মার বিষয় থাকে, তাহলে খুব সতর্ক থাকতে হবে আদালতের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেন হাজির থাকা যায়। প্রতি তারিখেই আদালতের কিছু খরচ থাকে এবং আইনজীবীর ফি—এসব বিষয়ে আগে থেকেই জেনে প্রস্তুতি নিয়ে আসা উচিত।
জেনে রাখতে হবে কার্যপদ্ধতি
কোন আদালতে কেমন করে প্রতিকার নিতে হয়ে, এ সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণা নিয়ে রাখা দরকার। তবে আপনার বিষয় নিষ্পত্তির জন্য আইনজীবী নিয়োগ করেছেন, তাই তিনিই বিষয়টি নির্ধারিত পদ্ধতি মেনে তা আদালতের চূড়ান্ত নিষ্পত্তির দিকে নিয়ে যাওয়া। তবে কিছু বিষয়ে প্রাথমিক কিছু ধারণা থাকলে সুবিধা হয়। আইনজীবীর কাছ থেকে কিছু বিষয়ে জেনে নিতে পারেন। নিম্ন ও উচ্চ আদালতের কার্যপদ্ধতি ভিন্ন। নিম্ন আদালতে যেমন নির্ধারিত তারিখে হাজিরার বিষয় থাকে উচ্চ আদালতে তা নাও লাগতে পারে। তাই এ বিষয়গুলো আইনজীবীর কাছ থেকে ধারণা নিতে হবে। মনে রাখতে হবে, একটি বিষয় বা মামলা-মোকদ্দমা নিয়ে আইনজীবীর যেমন দায়িত্ব আছে, তেমনি আপনারও দায়িত্ব আছে তাঁর কাছ থেকে সব বিষয়ে অবগত থাকা। কোনো কারণে আইনজীবী বদল করতে চাইলেও সে সুযোগ আপনার রয়েছে।
লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।