ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বিচার চেয়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালে গতকাল সোমবার (১৫ অক্টোবর) ৭টি মামলা হয়েছে। ঢাকায় অবস্থিত সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে সাত ব্যক্তি পৃথক সাতটি মামলা করেন।
ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস্সামছ জগলুল হোসেন সাতটি মামলার মধ্যে একটি মামলাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করতে মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। দুটি মামলা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে গেন্ডারিয়া ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর অপর তিনটি মামলা সরাসরি খারিজ করার আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
সাইবার ট্রাইব্যুনালের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) নজরুল ইসলাম শামীম গণমাধ্যমকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর এই প্রথম সাইবার ট্রাইব্যুনালে সাতজন ব্যক্তি হাজির হয়ে নালিশি মামলা করেছেন। তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী সংক্ষুব্ধ যেকোনো নাগরিক সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে মামলা করতে পারবেন।
যে সাতজন ব্যক্তি আদালতে মামলা করেছেন এর মধ্যে তিনজন নারী আর চারজন পুরুষ।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাস হওয়ার পর প্রথম মামলাটি করেছে পুলিশের অপরাধ ও তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। মেডিকেলের ভুয়া প্রশ্নপত্র ফাঁস করার অভিযোগে সিআইডি ১০ অক্টোবর পল্টন থানায় এ মামলা করে।
পুলিশ ও আদালত সূত্র বলছে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পাসের পর এখন পর্যন্ত ঢাকায় তিনটি মামলা করেছে পুলিশ। পল্টন ছাড়াও রাজধানীর শাহবাগ ও গুলশান থানায় মামলা হয়েছে।
একটি মামলা এজাহার হিসেবে নিতে নির্দেশ
একটি মামলার আরজি ও আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এক নারীর (৩০) গত বছর পারিবারিকভাবে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁর স্বামী ইতালি চলে যান। বিয়ের পর ওই নারীর ফেসবুক পাসওয়ার্ড জেনে নেন তাঁর স্বামী। বিদেশে থাকা অবস্থায় ইমো, ভাইবার, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে তাঁদের যোগাযোগ চলতে থাকে। বিয়ের ৯ মাস পর স্বামী বাংলাদেশে চলে আসেন। গত এপ্রিলে ওই নারী তাঁর স্বামীকে ডিভোর্স দেন। এরপর ফেসবুক, মেসেঞ্জার, ভাইবার, ইমোতে ওই নারীর আপত্তিকর ছবি প্রকাশ করেন তাঁর সাবেক স্বামী। এ ঘটনায় মিরপুর থানায় ওই নারী মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা না নেওয়ায় তিনি আদালতে হাজির হয়ে মামলা করেছেন।
ওই নারীর আইনজীবী ইমরুল কায়েস গণমাধ্যমকে বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই নারী তাঁর সাবেক স্বামীর বিরুদ্ধে আদালতে হাজির হয়ে নালিশি মামলা করেন। আদালত ওই নারীর মামলাটি এজাহার হিসেবে রেকর্ড করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৩(২), ২৪-ক, ২৫-ক এবং ২৯ (২) ধারায় মামলা করেন ওই নারী।
দুটি মামলা তদন্তের নির্দেশ
ট্রাইব্যুনালে করা দুটি মামলা তদন্তের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ বছরের এক নারীর অভিযোগ তিনি যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকাতে বাস করেন সোহাগ হোসেন নামের এক ব্যক্তি। তিনি তাঁর সন্তানদের স্কুলে আনা-নেওয়ার পথে সোহাগ নামের এক যুবকের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর আসামি সোহাগ তাঁর মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন। তিনি (সোহাগ) ফোনে তাঁকে (নারী) প্রেমের প্রস্তাব দেন। সোহাগকে ফোন করতে নিষেধ করার পরও গভীর রাতে ফোন দেন। প্রতিবাদ করায় তাঁর শিশুসন্তানকে অপহরণ করার হুমকি দেন সোহাগ। ওই নারীর অভিযোগ, সোহাগ তাঁর ছবি বিবৃত করে ফেসবুক, ইমোতে প্রকাশ করেন। ওই নারীর এই অভিযোগ তদন্ত করতে গেন্ডারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৬ ও ২৭ ধারায় মামলা করেন ওই নারী।
আবদুস সালাম নামের এক ব্যক্তি রফিকুল ইসলাম নামের আরেক ব্যক্তির বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মামলা করেন। সেখানে বলা হয়, আবদুস সালাম থাকেন দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায়। আসামি রফিকুল বাদী সালামের নামে বিভিন্ন মিথ্যা তথ্য ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। এ মামলাটি তদন্ত করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
অন্য চারটি মামলা
এক নারী নালিশি মামলায় বলেছেন, গত বছর উত্তরার একটি প্রতিষ্ঠানে তিনি চাকরি করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের পাঁচজন তাঁকে ধর্ষণ করে তা ভিডিও করে। বিয়ের পর আসামিরা ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। আদালত ওই নারীর মামলা খারিজের আদেশ দেন। ওই নারী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫ ধারায় মামলা করেন।
কামাল উদ্দিন আহমেদ নামের একজন মামলায় দাবি করেন, ২০১৬ সালে তিনি ‘একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা’ নামে একটি সংগঠন করেন। আবুল বাশার নামে এক ব্যক্তি কামালকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন। কামাল উদ্দিনও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৫-ক ধারায় মামলা করেন।
সুজন আহমেদ নামের এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৪ এর (১) ধারায় মামলা করেন। মামলায় সুজন দাবি করেন, তিনি মোটরচালক লীগের সাভার পৌর কমিটির প্রচার সম্পাদক। এই এলাকার কাজী রিপন ফেসবুক আইডি খুলে বিভিন্ন প্রতারণা করে আসছেন। ছাত্রলীগের সাবেক এক সাধারণ সম্পাদকের ছবি বিকৃত করে তা ফেসবুকে প্রচার করেন আসামি রিপন। আদালত এ মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন।
আর আনোয়ার হোসেন আবু নামের এক ব্যক্তি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৯ ধারায় মামলা করেন। মামলায় তিনি বলেছেন, চানখাঁরপুলে তাঁর একটি হোটেল আছে। হোটেলের খাবার নিয়ে রুদ্র সাইফুল নামের এক ব্যক্তি ফেসবুকে আপত্তিকর তথ্য প্রচার করেছেন। সূত্র: প্রথম আলো