নুরে আলম:
একজন সাধারণ ব্যক্তি এবং একজন আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তির মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল একজন সাধারণ ব্যক্তি জানেন কোনটা অপরাধ আর কোনটা অপরাধ নয় কিন্তু আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ ব্যক্তি একই বিষয় জানার সাথে জানেন কোন আইনের কত ধারায় সেই বিষয়ে বলা আছে। কোন আইনের কোন ধারা জানেন বলেই তিনি অভিজ্ঞ। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩ হাজারের বেশি আইন রয়েছে। সব আইনের সব ধারা মনে রাখা দুঃসাধ্য ব্যাপার তবে আইনকে পেশা হিসেবে নিলে অন্তত কোন কোন আইনে কি রয়েছে সেটা মনে রাখতে হবে।
একেবারে সঠিক ধারা মনে রাখা প্রয়োজন আইনের ছাত্রদের জন্য কারণ তারা আইন বিষয়ে ডিগ্রী নেওয়ার পর ২টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হয়। একটি হল জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা আর অন্যটি হল আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা। জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় নির্বাচিত হলে আপনি সহকারী জজ হিসাবে নিয়োগ পাবেন আর আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষা পাস করলে আপনি আদালতে আইনজীবী হিসাবে কাজ করার অনুমতি পাবেন। আইনের সকল শিক্ষার্থীর একটা সাধারণ প্রশ্ন হল “আইনের ধারা কিভাবে মনে রাখবো?”
জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা বা আইনজীবী নিবন্ধন পরীক্ষার প্রাথমিক নির্বাচনী বা এমসিকিউ (MCQ) পরীক্ষায় এখন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ প্রশ্ন আসে ধারা নিয়ে। যেমন, দণ্ডবিধির কোন ধারায় চুরি নিয়ে বলা আছে? বা দণ্ডবিধিতে কত নম্বর ধারায় চুরির সংজ্ঞা আছে? ইত্যাদি। এছাড়াও লিখিত পরীক্ষায় যদি বর্ণনার সাথে সঠিক ধারা উল্লেখ করা যায় তবে পরীক্ষক বেশি নম্বর দেন।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল প্রাথমিক নির্বাচনী পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে সঠিক ভাবে ধারা মনে রাখতে হবে। এই বিষয় মাথায় রেখে আজ আলোচনা করা হবে কিভাবে একজন আইনের শিক্ষার্থী আইনের ধারা সহজে মনে রাখতে পারবেন। অনেক জুডিসিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার পরীক্ষার্থী সব গুলো আইনের নাম বলতে পারেন না সেখানে তাদের প্রশ্ন করা হয় আইনের ধারা নিয়ে। যেকোনো আইন পড়ার এবং ধারা মনে রাখার ধাপ গুলো হল;
ধাপ ১) সবার প্রথমে মনকে ঠিক করতে হবে যে আপনি ধারা মনে রাখতে চান এবং মনের মধ্যে এই আগ্রহ তৈরি করতে হবে ।
ধাপ ২) প্রথমে আপনি মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন মোট কয়টি ধারা আছে , কয়টি অধ্যায় বিভক্ত এবং কি ? যেমন, দণ্ডবিধি ১৮৬০ এ মোট ধারা রয়েছে ৫১১ টি এবং অধ্যায় রয়েছে ২৩ টি।
ধাপ ৩) এরপর উক্ত আইনের গুরুত্বপূর্ণ ধারা গুলো নির্বাচন করতে হবে।
যেমন দণ্ডবিধির গুরুত্বপূর্ণ ধারা:
মৃত্যুদণ্ডের ধারাগুলো: ১২১, ১৩২, ১৯৪, ৩০২, ৩০৩, ৩০৫, ৩০৭(২), ৩৯৬
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ধারা গুলো:
১২১, ১২১ক, ১২২, ১২৪ক, ১২৫, ১২৮, ১৩০, ১৩২, ১৯৪, ১৯৫, ২২৫, ২২৫ক, ২২৬, ২৩২, ২৩৩, ২৫৫, ৩০২, ৩০৪, ৩০৫, ৩০৭, ৩১১-৩১৫ , ৩২৬, ৩২৯, ৩৬৪, ৩৭১, ৩৭৬, ৩৭৭, ৩৮৮, ৩৮৯, ৩৯৪, ৩৯৬, ৪০০, ৪০৯, ৪১২, ৪১৩, ৪৩৬, ৪৩৭, ৪৪৯, ৪৫৯, ৪৬০, ৪৬৭, ৪৭২, ৪৭৪, ৪৭৫, ৪৭৭
সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ধারাগুলো : ১২৬, ১২৭, ১৬৯
শুধুমাত্র জরিমানা দণ্ড : ১৩৭, ১৫৪-১৫৬, ১৭৬, ২৯৪ক, ১৭১, ২৭৮, ২৬৩ক, ২৮৩, ২৯০, ১২৩-১২৮, ১৩০, ১৩৪, ৩৮০, ৪৫৭।
দণ্ডবিধির প্রথম শাস্তির ধারা ১০৯ এবং
সর্বশেষ শাস্তির ধারা ৫১১।
সবচেয়ে কম শাস্তির ধারা ৫১০ এবং সর্বোচ্চ ৩০৩
এভাবে আপনার নিজের মত করে সাজিয়ে নিবেন।
ধাপ ৪) যেকোনো বিষয়ের শুরুর ধারা এবং শেষ ধারা। তাহলে যেকোনো মাথায় একটি কাঠামো তৈরি হবে উক্ত বিষয় সম্পর্কে। গুরুত্বপূর্ণ ধারার মাঝে যেসকল ধারা রয়েছে সেটা সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে হবে ।
যেমন চুরি বিষয়ে শুরুর ধারা ৩৭৮ এবং শেষ ধারা ৩৮২।
ধাপ ৫) নিয়মিত অনুশীলন করতে হবে। প্রতিদিন করলে খুব ভাল, না হলে সপ্তাহে অন্তত একবার পড়তে হবে। তাও সম্ভব না হলে অন্তত গুরুত্বপূর্ণ ধারা গুলো নিয়মিত পড়তে হবে।
আইন নিয়ে কিছু করতে হলে যেমন আপনি বিচারক বা আইনজীবী হলে আপনাকে ধারা মনে রাখতেই হবে। আর এই পেশায় পড়াশুনার কোন বিকল্প নাই। আমাদের দেশে প্রতিষ্ঠিত আইনজীবীগণ এখনো নিয়মিত পড়াশুনা করেন।
আশাকরি বিষয়টি সকলে বুঝেছেন। আপনি যদি উপরোক্ত ৫ ধাপ মেনে চলেন তবে আপনি অবশ্যই ধারা মনে রাখতে পারবেন। সব সময় মূল আইন পড়ুন এবং গাইড বা নোট বইকে সহায়ক বই হিসাবে ব্যবহার করুণ।
লেখক: পরিচালক বাংলা ল’ স্কুল ইউটিউব চ্যানেল এবং শিক্ষানবিশ আইনজীবী ঢাকা জজ কোর্ট