ঢাকার রাস্তায় গভীর রাতে পুলিশের চৌকিতে তল্লাশির নামে এক নারী হেনস্তার শিকার হয়েছেন। এই নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ভিডিওটি যিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন, ফেসবুকে তাঁর পরিচয় রাকিব রাজ। পরনে ঢাকা মহানগর পুলিশের পোশাক, ব্যাজে নাম মিজানুর। তিনি নিজেকে বাংলাদেশ পুলিশের একজন কনিষ্ঠ কর্মকর্তা বলেও পরিচয় দিয়েছেন। ইতোমধ্যে নারীকে হেনস্তায় জড়িত পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
রাকিব রাজ ফেসবুকে তাঁর পোস্টে ওই নারী সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য লিখে বলেন, ‘আজ রাত ২টায় এই মেয়েটাকে চেকপোস্টে পুলিশ চেক করতে চাইলে সে পুলিশের সঙ্গে এইরকম ব্যবহার করেন। সবাই প্লিজ শেয়ার করবেন।’ ভিডিওটির নিচে যাঁরা মন্তব্য করেছেন, তাঁদের বড় অংশ পুলিশের আচরণের সমালোচনা করছেন। একপর্যায়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের সাইবার অপরাধ দমন বিভাগের কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি লেখেন, ‘পুলিশ চেকপোস্টে গভীর রাতে একজন ভদ্রমহিলার সঙ্গে কিছু পুলিশ সদস্যের ভিডিওসহ কথোপকথন আমাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে একটি পেশাদারি সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ কনসার্নড (উদ্বিগ্ন)। এ নিয়ে অনলাইনে ঘৃণাবোধ না ছড়ানোর জন্য অনুরোধ করা হলো। নিরপেক্ষ ও সঠিক অনুসন্ধান সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আস্থা রাখুন।’
ভিডিওটি সাড়ে ছয় মিনিটের। এতে দেখা যায়, তল্লাশিচৌকিতে একদল পুলিশ সিএনজিচালিত অটোরিকশা থামানোর পর ওই নারী হেনস্তার শিকার হন। ওই নারী বারবারই পুলিশ সদস্যদের তাঁর ব্যাগ তল্লাশির অনুরোধ করেন। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা তাঁর মুখের ওপর আলো ফেলে নানা রকম অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন ও আপত্তিকর মন্তব্য করতে থাকেন।
[youtube https://www.youtube.com/watch?v=DZUvwDKIDqI?controls=0]
ভিডিওটির শুরুতে ওই নারী বলেন, ‘আপনি আমার সঙ্গে এভাবে কথা বলছেন কেন? আপনি ব্যাগ চেক করেন।’ জবাবে ওই পুলিশ সদস্য আবারও আপত্তিকর মন্তব্য করে তাঁর মুখে আলো ফেলতে শুরু করেন। এতে তিনি বিরক্ত হয়ে আলো সরিয়ে তল্লাশি করতে বলেন। কিন্তু পুলিশ সদস্য উল্টো তাঁকে বেয়াদব মেয়ে বলে গালি দেন। ওই নারী বলেন, তিনি কোনো অযৌক্তিক কাজ করছেন না। তখন একজন পুলিশ সদস্যকে ওই নারীর বক্তব্য ভালোভাবে রেকর্ড করার কথা বলতে শোনা যায়। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে জ্যেষ্ঠ কোনো কর্মকর্তার আসার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তাঁর সামনেও পুলিশ সদস্যরা ওই নারীর মুখে আলো ফেলতে থাকেন। একজন বলেন, তিনি তাঁকে দেখবেন। আলো সরাবেন না। ঘটনার শিকার ওই নারী সে সময় অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ পুলিশ সদস্যকে নালিশ করেন। ওই নারী জানতে চান, চেকপোস্টটি কোন থানার। জবাবে টহল দলের অপেক্ষাকৃত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাকে বলতে শোনা যায়, ঢাকা শহরে থেকে চেকপোস্ট চেনেন না কেন?
কোন থানার টহল দল গত সোমবার দিবাগত রাতে তল্লাশি করেছে, জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া ও জনসংযোগ) মাসুদুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, অপরাধীকে শনাক্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ সূত্র জানায়, তল্লাশিচৌকিটি ছিল রামপুরায়। দায়িত্বে ছিলেন মিরপুরের দাঙ্গা দমন বিভাগের (বর্তমান নাম পাবলিক অর্ডার ম্যানেজমেন্ট) পুলিশ সদস্যরা। যিনি ফেসবুকে ভিডিও আপলোড করেছেন, তাঁকে ও তাঁর সহযোগীদের তলব করা হয়েছে।
এদিকে গত রাত পৌনে ১২টার দিকে সাইবার অপরাধ দমন বিভাগ সূত্র জানায়, নারীকে হেনস্তায় জড়িত পুলিশের তিন সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর আগেও মাঠপর্যায়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নারীদের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন সময়। সন্তানকে মোটরসাইকেলে করে স্কুলে দিয়ে ফেরার পথে ধানমন্ডিতে এক ট্রাফিক পুলিশের হেনস্তার শিকার হন একজন নারী সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বছর তিনেক আগে বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশনএইড ‘নিরাপদ নগরী নির্ভয়ে নারী’ শিরোনামে এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই জরিপে অংশগ্রহণকারী ৯৫ শতাংশ নারী মনে করেন, পুলিশি সহায়তা পাওয়ার ক্ষেত্রে হেনস্তার শিকার হতে হয়।