বিরোধী দলের আপত্তি নাকচ করে ‘সরকারি চাকরি বিল–২০১৮’ জাতীয় সংসদে পাস হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ফৌজদারি অপরাধ করলেও আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার আগে কোনো সরকারি কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করতে সরকার বা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
সংসদের বৈঠকে বুধবার (২৪ অক্টোবর) বিলটি উত্থাপন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।
সংসদে বিরোধী দলের ১১ জন সদস্য আইনটির এই বিধানের বিরোধিতা করে বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, এই বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ, সংবিধানে বলা হয়েছে, সব নাগরিক সমান, কিন্তু এই আইনে একটা শ্রেণিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এভাবে আইনটি করা ঠিক হবে না। তবে বিরোধী দলের এই আপত্তি টেকেনি।
বিরোধী দলের সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়। পরে বিলটি কণ্ঠভোটে পাস হয়।
আইনে বলা হয়েছে, সরাসরি জনবল নিয়োগের ভিত্তি হবে মেধা ও উন্মুক্ত প্রতিযোগিতা। তবে সংবিধানের ২৯ (৩) অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পদ সংরক্ষণের বিষয়ে সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে। অর্থাৎ, নাগরিকদের যেকোনো অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব লাভ করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে।
বিলে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি সেবা পাওয়ার জন্য আবেদন করলে সরকার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে, কিংবা সময়সীমা উল্লেখ না থাকলে যুক্তিসংগত সময়ের মধ্যে আবেদন নিষ্পত্তি করতে হবে। কোনো কর্মচারী এই ধারার বিধান লঙ্ঘন করলে তা ওই কর্মচারীর অদক্ষতা ও অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ওই কর্মচারীর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায় করে সেবাপ্রার্থী ব্যক্তিকে দিতে পারবে।
এই আইন অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় মৃত্যুদণ্ড বা এক বছর মেয়াদের বেশি কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে রায় দেওয়ার দিন থেকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত হবেন। তবে কর্মচারী এক বছর বা তার কম মেয়াদের জন্য দণ্ডিত হলে কর্তৃপক্ষ ওই ব্যক্তিকে তিরস্কার, পদোন্নতি ও বেতন স্থগিত করা, পদ ও বেতন স্কেলের অবনমন করা এবং সরকারি সম্পদের ক্ষতি হয়ে থাকলে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারবে।
আইনে আরও বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের কর্ম হতে বরখাস্ত হয়েছেন, এমন কোনো ব্যক্তি ভবিষ্যতে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মে বা রাষ্ট্রের অন্য কোনো কর্তৃপক্ষে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না।
তবে এই আইনে যা–ই থাক না কেন, রাষ্ট্রপতির কাছে সন্তোষজনক মনে হলে তিনি সাজা পাওয়া ব্যক্তিকে অব্যাহতি প্রদান করতে পারবেন এবং চাকরিতে পুনর্বহাল করতে পারবেন।