ড. বদরুল হাসান কচি:
এই সময়ের রাজনীতিতে একটি কাঙ্ক্ষিত সংলাপ জনপ্রত্যাশা ছিল। অবশেষে সেটি হতে যাচ্ছে। প্রচণ্ড উত্তাপের পর প্রকৃতিতে হঠাৎ যেমন শীতল আবহাওয়ার একটি পরিবর্তন দেখা দেয় ঠিক তেমনি দেশের রাজনীতির আবহাওয়ায়ও উত্তাপ বাক্য বিনিময়ের পর শান্তিপূর্ণ আলোচনার দিন, সময় ও স্থান নির্ধারণ হয়েছে। রাজনৈতিক আবহাওয়ায় শান্তির সুবাতাস বইছে। কতটুকু শান্তিময় থাকে সেটি সময়ের জবাব।
গেল রবিবার জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সংলাপ চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চিঠি পাঠান ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। চিঠির মূল বক্তব্যে তিনি লিখেন, ‘একটি শান্তিপূর্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে সকলের অংশগ্রহণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাথে একটি অর্থবহ সংলাপের তাগিদ অনুভব করছে এবং সে লক্ষ্যে আপনার কার্যকর উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।’ তার জবাবে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের দিন, সময়, স্থান ঠিক করে চিঠিতে লিখেন, ‘অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে সংবিধানসম্মত সকল বিষয়ে আলোচনার জন্য আমার দরজা সর্বদা উন্মুক্ত।’
সংলাপের উদ্যোগ অবশ্যই সুসংবাদ। তবে একটা সংলাপের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে বা অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, তা আশা করা কঠিন। কারণ ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি, সরকারের প্রতি ঐক্যফ্রন্ট ৭ দফা দাবী পেশ করেছেন। যেখানে প্রথম দফায় রয়েছে কারাগারে আটক দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি। যেখানে আওয়ামী লীগের পক্ষে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এতদিন জানিয়ে আসছিলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সাত দফার এক দফাও মানা হবে না। তাদের সব দফা ভিত্তিহীন ও অযৌক্তিক’; সেখানে সংলাপে বসে সব দাবীর ভিত্তি শক্ত ও যৌক্তিক হয়ে যাবে সেটা ভাবা নিশ্চয়ই ঠিক হবে না। তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমন্ত্রনপত্রে ‘সংবিধানসম্মত’ শব্দটি যুক্ত করে সংলাপে তার অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন। অর্থাৎ আলোচনা-দাবী যাই হোক, সেটি সংবিধানের ভেতরে থেকেই হতে হবে, বাহিরে হাঁটার পথ বাতলিয়ে নয়।
যাই হোক, পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির মধ্য দিয়ে একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান আসুক, প্রত্যাশা জনগণের।
লেখক- আইনজীবী ও সম্পাদক, ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডট কম।