বিচার বিভাগের উপর প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের প্রতিবাদে আদালত বর্জন কর্মসূচী পালন করছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। তবে আদালত বর্জন কর্মসূচিতেও নির্ধারিত সময় থেকে চলছে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের কার্যক্রম। সমিতির বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা আদালতের প্রবেশমুখে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করছে। এদিকে এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিপন্থি আইনজীবিরা মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। এ নিয়ে উভয় পক্ষ মিছিল নিয়ে মুখোমুখি হলে মৃদু ধাক্কাধাক্কি ও হট্টগোল হয়।
আজ বুধবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৯টায় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চে বিচারিক কার্যক্রম শুরু হয় এবং সাড়ে ১০টার পরে হাইকোর্ট বেঞ্চগুলোতে কার্যক্রম শুরু হয়।
তবে সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে সভাপতির কক্ষের সামনের গেটে তালা লাগিয়ে আদালত বর্জনের পক্ষে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্ট বার ভবন থেকে হাইকোর্ট বিভাগের অ্যানেক্স ভবনের দিকেরও গেটেও তালা দেওয়া হয়। এ কারণে সাধারণ আইনজীবীরা নিচতলার সিঁড়ি দিয়ে আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বেঞ্চগুলোতে যেতে হচ্ছে।
কিন্তু সকাল সাড়ে দশটার দিকে বার সভাপতির কক্ষের সামনের দিকে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুনের নেতৃত্বে আইনজীবীরা মিছিল নিয়ে আসলে বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। উভয়পক্ষ এ সময় ধাক্কাধাক্কিতে জড়িয়ে পড়ে। এতে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এখনো দুই পক্ষ মুখোমুখি অবস্থান করছে। তাদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
[youtube https://www.youtube.com/watch?v=2ZMR13WNvDg?controls=0]
এ সময় আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা তালা ভাঙতে গেলে বিএনপিপন্থিরা বাধা দেয়। তবে এ সুযোগে অ্যানেক্স ভবনের দিকের গেটের তালা হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে ফেলেন আওয়ামীপন্থি আইনজীবীরা।
এ সময় ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে রাজনৈতিক মঞ্চ বানিয়ে ফেলা হয়েছে। রায়ের বিরুদ্ধে লড়াই আইনিভাবেই করতে হবে। আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত আইনজীবী সমিতির সিদ্ধান্ত নয়। আদালত বর্জন করলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা করতে পারেন। গেটে তালা দিয়ে সাধারণ আইনজীবীদের তারা বাধ্য করতে পারেন না। এ তালা ভাঙতে হবে।
এর আগে বিক্ষোভ চলাকালে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘ঘোষিত আদালত বর্জন কর্মসূচিতে সাধারণ আইনজীবীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিয়েছেন। তারাই সুপ্রিম কোর্ট আদালত ভবনের গেটে তালা দিয়েছেন।’
এ সময় জয়নুল আবেদীন সারাদেশের আদালত বর্জনের হুমকি দিয়েছেন। সমিতির সভাপতির নিজ কক্ষের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, আদালতের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকলে সারাদেশে কোর্ট (আদালত) বর্জন কর্মসূচি দেয়া হবে।
জয়নুল আবেদীন অভিযোগ করে বলেন, চাপের মুখে পড়ে সরকারের কাছে মাথা নত করে বিচারক খালেদা জিয়াকে ১০ বছরের সাজা দিয়ে রায় দিয়েছেন। আদালতের উপর সরকারের হস্তক্ষেপ অব্যাহত থাকলে সারাদেশে বর্জন কর্মসূচি দেয়া হবে।
মঙ্গলবার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় হাইকোর্টের রায় ঘোষণার পর দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন বুধবার (৩১ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগ বর্জনের ঘোষণা দেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় এক রায়ে হাইকোর্ট বিভাগ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতের দেওয়া পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বাড়িয়ে ১০ বছর করেছেন। এছাড়া ৫ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া এবং ১০ বছরের দণ্ড থেকে খালাস চেয়ে মাগুরার সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে কাজী কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদের আপিল খারিজ করেন আদালত।
প্রসঙ্গত, জয়নুল আবেদীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান, একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার আইনজীবীও। মঙ্গলবার রায় ঘোষণার সময় তিনি ওই আদালতে ছিলেন না। এরপর দুপুর দেড়টার পর আদালত বর্জনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘বার অ্যাসোসিয়েশন (সুপ্রিম কোর্ট বার) সিদ্ধান্ত নিয়েছি আদালতের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখা, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সমুন্নত রাখার জন্য। এ রকম একটা বেআইনি রায় দেওয়া হলো তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের জন্য বুধবার উভয় বিভাগে, আপিল বিভাগসহ সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত আদালত বর্জনের কর্মসূচি আমরা ঘোষণা করছি।’
তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ এ কর্মসূচিতে কোনো রকম বাধা আসলে বাধা অতিক্রম করবো। যদি কোনো বাধার সৃষ্টি হয় পরবর্তীতে বিচার বিভাগকে সমুন্নত রাখার জন্য কঠিন কর্মসূচি দেবো।’