মাত্র পাঁচ বছর বয়সে মাকে হারিয়েছেন। মায়ের স্মৃতি তেমন মনেও নেই সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের। আসছে ডিসেম্বরে, বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে হারানোর এক বছর পূর্ণ হবে। বাবা-মা হারা নওফেল এখন ৭০ বছরের পুরনো রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। সেই দলের মনোনয়ন পেয়ে জীবনে প্রথমবারের মতো সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে যাচ্ছেন বয়সের কোঠা চল্লিশ অতিক্রম না করা নওফেল।
যে মাসে বাবাকে হারিয়েছেন, সেই মাসে রাজনৈতিক জীবনের এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন তিনি। স্বাভাবিকভাবেই যে বাবা ছিলেন তার রাজনৈতিক গুরু, সেই বাবার শূন্যতা কঠিন করে বুকে বাজছে এই মুহূর্তে নওফেলের বুকে।
দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনার স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র পাবার পর গণমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নওফেল। তিনি বলেন, ‘খুবই আনন্দ হচ্ছে। বাবার কথাও খুব বেশি মনে পড়ছে। নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে আমার বাবাকে মূল্যায়ন করেছেন। বাবা বেঁচে থাকলে খুব খুশি হতেন। বাবার জন্য খুব খারাপ লাগছে।’
বন্দরনগরীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী ও চান্দগাঁও) আসন থেকেই দলের মনোনয়ন পেয়েছেন নওফেল, যার বাবা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামের ১৭ বছরের মেয়র ছিলেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন আমৃত্যু দলের নগর কমিটির সভাপতি থাকা এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী।
নওফেল বলেন, ‘আমাকে শৈশব থেকেই বাবা এক ধরনের রাজনৈতিক প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে বড় করেছেন। আমার মনে আছে, যখন আমার খুব বেশি বোঝার বয়স হয়নি, ১৯৮৭ সালে, বাবা আমাকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে নিয়ে গিয়েছিলেন। চট্টগ্রামে যারা আওয়ামী লীগকে সংঘটিত করেছেন, আতাউর রহমান খান কায়সার, পুলিন দে, আক্তারুজ্জামান চৌধুরী বাবু, এম এ মান্নান—উনাদের সকলের সাহচর্য আমি ছোটবেলা থেকে পেয়েছি। আরেকটা বিষয় ছিল, বাবা আমাকে প্রচুর পলিটিক্যাল বই পড়তে দিতেন। বলতে গেলে, শৈশবেই আমার রাজনীতিতে হাতেখড়ি। একসময় লন্ডনে পড়তে চলে যাওয়ায় রাজনীতিতে মাঝে কিছুটা বিরতি দিতে হয়েছে।’
নওফেলের বাবা মহিউদ্দিন ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রতিশোধ নিতে অস্ত্র হাতে নিয়েছিলেন। ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণও নিয়েছিলেন।
নওফেল আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগের আদর্শ এবং জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আমার বাবা সবসময় অনুগত ছিলেন। বাবার স্বপ্ন ছিল, একদিন আমি দলের জন্য এবং আমার নেত্রীর জন্য, দেশের জন্য কাজ করব। সেই সুযোগ এসেছে, কিন্তু বাবা নেই। এজন্য খুব খারাপ লাগছে।’
‘জাতীয় রাজনীতির জটিল সমীকরণের মধ্যে পড়েছিল আমার আসনটি। সেখান সমাধান বের করে নেত্রী যেভাবে আসনটিতে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, আমি অবশ্যই দলের আদর্শ এবং নেত্রীর প্রতি অনুগত থাকব। আমি মনে করি, নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়ে আমার বাবাকে মূল্যায়ন করেছেন। এটা আমার বাবা দেখে যেতে পারলে খুব খুশি হতেন।’
২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর জীবনাবসান ঘটে। এর আগে ২০১৬ সালের অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান নওফেল।
২০০৮ সালে চট্টগ্রাম-৯ আসনে দলের মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য হয়েছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল ইসলাম বিএসসি। ২০১৪ সালে তার বদলে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলুকে মহাজোট থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আর নুরুল ইসলাম বিএসসিকে মন্ত্রী করা হয়।
এদিকে নওফেলের মনোনয়ন পাবার খবরে চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও অভিনন্দনে ভাসছেন নওফেল।
দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত হওয়ার পর নওফেলের জন্য চট্টগ্রামে নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করা হয়েছে। নওফেলের ভাই বোরহানুল হাসান চৌধুরী সালেহীন এই মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন বলে তিনি সারাবাংলাকে জানিয়েছেন।
প্রয়াত মহিউদ্দিনের ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ওসমান গণি বলেন, ‘আমাদের নেতা নওফেল ভাই মনোনয়ন পাবার খবর শুনে দলে দলে নেতা-কর্মীরা বাসায় আসছেন। সবার মধ্যে সাড়া পড়ে গেছে। ইনশল্লাহ, সবাই মিলে-মিশে ৩০ ডিসেম্বর নৌকার জয় নিশ্চিত করব।’
নওফেলের মনোনয়ন পাবার খবরে রোববার দুপুরে চট্টগ্রামের সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসিন কলেজে আনন্দ মিছিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন কলেজ ছাত্রলীগ নেতা মায়মুন উদ্দিন মামুন। সূত্র : সারাবাংলা