পানিতে জন্ডিসের জীবাণু ‘হেপাইটাইটিস-ই’ নির্ণয়ের ব্যবস্থা নেই দেশে

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে জন্ডিসের জীবাণু ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস আছে কি না তা নির্ণয়ের জন্য পানি পরীক্ষার কোনো ব্যবস্থা নেই বাংলাদেশে। শুধু রক্ত পরীক্ষা করে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস চিহ্নিত করার ব্যবস্থা রয়েছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটির পক্ষ থেকে গতকাল রোববার (২৫ নভেম্বর) হাইকোর্টে দাখিল করা পাঁচটি পৃথক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

প্রতিবেদনগুলো জমা দেয়ার সময় আদালত বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বলে জানান এ সংক্রান্ত বিষয়ে রিটকারী আইনজীবী মহিউদ্দিন মো. হানিফ।

আদালত বলেন, এটা কীভাবে সম্ভব যে দেশের পানি পরীক্ষার জন্য কোনো যন্ত্রই নেই।

রোববার হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে এসব প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। আদালতে এদিন উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন মো. হানিফ (ফরহাদ), রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুর্টি অ্যার্টিনি জেনারেল একরামুল হক টুটুল, সহকারী অ্যার্টনি জেনারেল পূরবী রানী শরমী ও পূরবী সাহা।

চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে জন্ডিসের জীবাণু ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে গত ৮ জুলাই হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশে এসব প্রতিবেদন দাখিল করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মহিউদ্দিন মো. হানিফের (ফরহাদের) করা এক রিট আবেদনে পানি পরীক্ষা করার আদেশ দেন আদালত। আদেশে জন্ডিস আক্রান্ত এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার পানিতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস আছে কি না তা পরীক্ষার জন্য এক মাসের মধ্যে একটি কমিটি গঠন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়।

এ কমিটিতে স্থানীয় প্রশাসনের দুইজন এবং তিনজন বিশেষজ্ঞ রাখতে বলা হয়। এ কমিটির প্রতিবেদন ৯০ দিনের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এ অবস্থায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মো. নুরুল আলম নিজামীকে সভাপতি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একটি কমিটি গঠন করে। এই কমিটির দেয়া প্রতিবেদন রোববার উপস্থাপন করা হয় হাইকোর্টে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবেশ থেকে পানি সংগ্রহ করে তা ঘনীকরণের মাধ্যমে ‘হেপাটাইটিস-ই’ শনাক্ত করা যায়। তবে, বতর্মানে এ ধরনের সেবা কোনো প্রতিষ্ঠান দেয় কি না তা আমাদের জানা নেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ভাইরোলজি বিভাগ শুধু রোগীদের রক্তের নমুনা থেকে ‘হেপাটাইটিস- ভি’ শনাক্ত করে থাকে। রোগতত্ত্ব , রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকে- অপর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘পানির নমুনা হতে, হেপাটাইটিস –ই ভাইরাস শনাক্তকরণের প্রযুক্তি নাই।’

একই ধরণের প্রতিবেদন দিয়েছে চট্টগ্রামের বিসিএসআইআর গবেষণাগার- এতে বলা হয়েছে, এখানে এই সুবিধা না থাকায় হেপাটাইটিস –ই ভাইরাস পরীক্ষা করা সম্ভব নয়। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মহাখালীর দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি এবং ন্যাশনাল ফুট সেফটি ল্যাবরেটরিতে পানি থেকে শনাক্ত করার পরীক্ষা করা সম্ভব না।

অন্যদিকে, সেন্ট্রাল ড্রাগ টেস্টিং ‘হেপাটাইটিস-ই’ ভাইরাস ল্যাবরেটরি আগ্রাবাদ চট্টগ্রাম থেকেও বলা হয়েছে, হাই কোর্টের নির্দেশনার আলোকে মন্ত্রণালয় কতৃক গঠিত কমিটির সভার সিদ্ধান্তমতে ল্যাবরেটরিতে ‘হেপাটাইটিস-ই’ ভাইরাস বর্তমানে শনাক্ত করা হয় না, ইতঃপূর্বেও করা হয়নি।

জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরি এবং ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরিতে পানি থেকে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাস শনাক্তকরণের পরীক্ষা করা হয় না।’

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইসিডিডিআরবি) দেয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘পানির নমুনা হতে ‘হেপাইটাইটিস-ই’ ভাইরাসের শনাক্তকরণের প্রযুক্তি আইসিডিডিআরবি-তে নেই।’