একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের হলফনামায় দেওয়া সম্পদের হিসাব নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হলফনামায় যারা সম্পদের অস্বাভাবিক হিসাব দিয়েছেন তাদের দিকেই বেশি নজর দিচ্ছে কমিশন। এ জন্য হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন সংগ্রহ করা হচ্ছে। সময়মত সংশ্নিষ্টদের হলফনামার কপি নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকেও সংগ্রহ করা হবে।
সূত্র জানায়, হলফনামার সম্পদের হিসাব যাচাই করে যাদের নামে-বেনামে অস্বাভাবিক সম্পদ পাওয়া যাবে তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অনুসন্ধান করা হবে। তাদের আয়ের বৈধ উৎস থাকতে হবে। তাদের মধ্যে যারা রাতারাতি আঙুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন তথ্য-প্রমাণসহ তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। ইসি নির্বাচনী ব্যয় হিসেবে ভোটারপ্রতি ৮ টাকা ও নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক ২৫ লাখ টাকা বেঁধে দিয়েছে। এর অতিরিক্ত অর্থ খরচ করা হলে তা হবে আচরণবিধি লঙ্ঘন। দুদক এ বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে দেখছে।
দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, প্রার্থীরা হলফনামায় সম্পদের সঠিক হিসাব দেবেন এটাই কমিশনের প্রত্যাশা। যারা সঠিক হিসাব দেবেন না, যাদের সম্পদের বৈধ উৎস থাকবে না, যাদের হিসাব আয়কর রিটার্নের হিসাবের সঙ্গে মিল থাকবে না তাদের সম্পদ অনুসন্ধান করা হবে।
জানা যায়, বিভিন্ন প্রার্থীর হলফনামার হিসাব থেকে জানা গেছে, এর আগের নির্বাচনের তুলনায় কারও কারও সম্পদ দুইশ’ গুণেরও বেশি বেড়েছে। অনেকে স্ত্রীর নামে রেখেছেন বিরাট অঙ্কের টাকার সম্পদ। এমন প্রার্থীদের আয়করের নথি সংগ্রহ করা হবে। হলফনামা ও আয়কর নথির সম্পদ মিলিয়ে দেখা হবে। যাদের হিসাবে গরমিল, অসামঞ্জস্য পাওয়া যাবে তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হবে। যাদের বক্তব্য যথার্থ, সন্তোষজনক হবে না তাদের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে আইনের আওতায় আনা হবে।
গত রোববার (২ ডিসেম্বর) মনোনয়ন বাছাই করে ২ হাজার ২৭৯টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাতিল হয় ৭৮৬ জনের। মনোনয়ন বৈধ হওয়া প্রার্থীদের হলফনামার সম্পদ এরই মধ্যে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ক্ষমতায় ও ক্ষমতার বাইরে থাকা অনেকেরই সম্পদ বেড়েছে জ্যামিতিক হারে।
সংশ্নিষ্ট সূত্র জানায়, হলফনামায় প্রার্থী ও তার পরিবারের সদস্যদের আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি, ব্যবসা, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, দোকান, শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত উল্লেখ করা হয়েছে। নিজের ও পরিবারের সদস্যদের স্থাবর সম্পদ হিসেবে কৃষি, অকৃষি জমি, আবাসিক ও বাণিজ্যিক পাকা ভবন, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, চা বাগান, রাবার বাগান, মৎস্য খামারসহ অন্যান্য সম্পদ উল্লেখ করা হয়েছে। অস্থাবর সম্পদ হিসেবে নগদ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমানো অর্থ, বন্ড, ঋণপত্র, শেয়ার, পোস্টাল, সঞ্চয়পত্র, বাস, ট্রাক, প্রাইভেটকার, মোটরসাইকেল, স্বর্ণ, মূল্যবান ধাতু ও পাথরে নির্মিত অলঙ্কার, ইলেকট্রনিক সামগ্রী, আসবাব ও অন্যান্য সম্পদ উল্লেখ করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, নিজে ও পরিবারের সদস্যরা কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক অথবা ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে থাকলে সেটাও হলফনামায় উল্লেখ করতে হয়। একইসঙ্গে সংশ্নিষ্ট ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের তথ্য ও বার্ষিক আয়-ব্যয়ের হিসাবও দিতে হয়। প্রতিটি হলফনামা এফিডেভিট, নোটারি পাবলিক ও ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা প্রত্যয়ন করতে হয়। প্রথমবার ঘোষণা দেওয়া তথ্য পরিবর্তন করা যায় না। কোনোরূপ ঘষামাজাও করা যাবে না। সমকাল