অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নোটিশ পাঠানো এবং তলবের ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইন যথাযথভাবে অনুসরণ না করায় দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক আল আমীনকে সতর্ক করেছেন হাইকোর্ট। দুদকের উপসহকারী পরিচালক মো. আল-আমীনকে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে এই সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে।
আদালত বলেছেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। যতদিন চাকরিতে থাকবেন ততদিন জনগণের সার্ভেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ভোলা সদর থানার ইলিশা ইসলামিয়া মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে দুদকে হাজির হতে যেদিন নোটিশ দেনা হয়েছিল। এ ঘটনায় দুদক কর্মকর্তার নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার পর গত বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ তাকে এই সতর্ক করেন।
এ সময় আদালতে রিটকারীর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ইউসুফ হোসনে হুমায়ুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। এ ছাড়া দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফজলুল হক।
এর আগে ভোলা সদর থানাধীন ইলিশা ইসলামিয়া মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার অভিযোগ এনে তার কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ দেন দুদকের উপ- সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. আল আমীন। কিন্তু যেদিন নোটিশ দেয়া হয় আবার সেদিনই তাকে দুদকে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়ায় ওই কর্মকর্তাকে তলব করেন হাইকোর্ট। যার ধারাবাহিকতায় আল আমীন বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
পরে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক বলেন, দুদক আইনে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নোটিশ দিয়ে হাজির হওয়া বা নোটিশের জবাব দেয়ার জন্য যুক্তিযুক্ত সময় দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু দুদক কর্মকর্তা নোটিশ পাঠিয়ে ওই একই দিনে তাকে হাজির হতে বলায় দুদক আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে। যার কারণে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করায় আদালত তাকে ক্ষমা করে সতর্ক করে দিয়েছেন।
ঘটনার বিবরণীতে জানা গেছে, ভোলা সদর থানাধীন ইলিশা ইসলামিয়া মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সার্টিফিকেট জাল ও অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে।
জাল সনদ দিয়ে চাকরি নেয়ার মাধ্যমে চার কোটি ৫৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ১১ ফেব্রুয়ারি দুদক ওই অধ্যক্ষকে নোটিশ দেয়। নোটিশে সেদিনই তাকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ তার কাছে হাজির হতে বলা হয়। এ অবস্থায় নোটিশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট অধ্যক্ষ।
রিট আবেদনে বলা হয়, এর আগে জনৈক সালাউদ্দিন অধ্যক্ষের বিএ পরীক্ষার সনদ জাল এবং ৪৮ লাখ ৯৪ হাজার ৩শ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৭ সালের ১৪ মে ভোলা সদর থানায় মামলা করেন। এ মামলায় সিআইডি তদন্ত শেষে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিনকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়ে আদালতে চূড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। এ অবস্থায় দুদক একই বিষয়ে তাকে নোটিশ দিয়েছে। এ রিট আবেদনে হাইকোর্ট গত ২৮ ফেব্রুয়ারি নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন ও রুল জারি করেন। এ রুলের ওপর শুনানিকালে গত ১৫ নভেম্বর এক আদেশে দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে তলব করেন। এ আদেশে বৃহস্পতিবার মামলার নথিসহ হাইকোর্টে হাজির হন দুদক কর্মকর্তা।