অর্থ পাচারের এক মামলায় এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামালকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দেয়া জামিন বহাল রেখেছেন হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ।
বৃহত্তর বেঞ্চের সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের রায়ের ফলে এই দাঁড়াল যে, অর্থ পাচারের মামলায় ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট আসামিকে জামিন দেয়ার ক্ষমতা রাখেন। তবে মামলার গুনাগুন দেখে অত্যন্ত সতর্কভাবে জামিন দিতে হবে।
রায়ে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, এ ধরনের অর্থ পাচারের মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে সতর্ক থেকে সঠিকভাবে বিচারিক মনন প্রয়োগ করতে হবে।
আদালত আরও বলেন, যেহেতু বিষয়টির সঙ্গে অর্থ পাচারের মতো গুরুতর দুর্নীতির অভিযোগ জড়িত এবং এ ধরনের মামলায় জামিন আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ম্যাজিস্ট্রেটকে মামলার এজাহার, বাদী-বিবাদী পক্ষের বক্তব্য এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধিসমূহ যথাযথভাবে পর্যালোচনা করতে হবে।
এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এম ওয়াহিদুল হক ও কর্মকর্তা আবু হেনা মোস্তফা কামালের জামিন বাতিল প্রশ্নে জারি করা রুল নিষ্পত্তি করে গত বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী নেতৃত্বাধীন তিন বিচারকের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে এই রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের দ্বিতীয় অপর বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।
তবে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রুল যথাযথ ঘোষণা করে এ দুজনকে দেওয়া নিম্ন আদালতের জামিন বাতিল করে দেন।
তিনি তার আদেশে বলেন, ম্যাজিস্ট্রেট আদালত অর্থ পাচার আইনের ২(ষ) (জ)(৯) (১০) ও ১৩ ধারা পর্যালোচনা করলে এটা কাচের মত পরিষ্কার যে, ম্যাজিস্ট্রেট এখতিয়ারবহির্ভূতভাবে তাদের জামিন দিয়েছেন।
যদিও এ ধরনের মামলায় জামিন ও রিমান্ডসহ সকল কিছুর এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে বিশেষ আদালতকে। তাই আইনের বিধান ও কালাকানুন ভঙ্গ করে স্বেচ্ছাচারমূলকভাবে জামিন দেওয়ায় তা বাতিল করা হল।
একই সঙ্গে আসামিদের এক মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পনের নির্দেশ দেওয়া হল। যদি আত্মসমর্পন না করে, তাহলে আসামিদের গ্রেপ্তার করতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হল।
রায়ে তিনি বলেন, দুর্নীতি অর্থনীতি ও সমাজ ব্যবস্থাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে দেশের মানুষ সোচ্চার। দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সার্বভৌম সংসদও বেশকিছু আইনও প্রণয়ন করেছে। তাই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে সরকারকে যেমন কঠোর হতে হবে, তেমনি আদালতকেও সতর্ক থাকতে হবে। এই সতর্কবার্তা দিতে হবে যে, সকলেই দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে। এবং সকলে মিলে দুর্নীতিকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করতে হবে।
আর এ মামলার দুই আসামির জামিন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগেও বহাল থাকায় তাদের জামিন বহাল থাকছে। তাছাড়া এ মামলার অন্য আসামিরাও জামিনে আছেন। আদালতে ওয়াহিদুল হকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন আরশাদুর রউফ ও শেখ বাহারুল ইসলাম। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বশির আহমেদ।
১৬৫ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি এবি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ওয়াহিদুল হকসহ আটজনের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। মামলার পরদিন গ্রেফতার করা হয় ওয়াহিদুল হক, ব্যাংকটির হেড অব ট্রেজারি আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও ব্যবসায়ী সাইফুল হককে। তাদের মহানগর হাকিম আদালতে নেয়া হলে আদালত ওয়াহিদুল হক ও মোস্তফা কামালকে জামিন দেন। আর সাইফুল হককে তিন দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়।
বিষয়টি নজরে আসার পর দুইজনের জামিন কেন বাতিল করা হবে না তা জানতে চেয়ে গত ৩১ জানুয়ারি রুল জারি করেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ। পাশাপাশি নিম্ন আদালতে থাকা মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠাতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতকে নির্দেশ দেয়া হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৪ এপ্রিল এক আদেশে বৃহত্তর বেঞ্চ গঠনের সুপারিশ করে মামলার নথি প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়ে দেন ওই হাইকোর্ট বেঞ্চ। এ অবস্থায় প্রধান বিচারপতি জামিনসংক্রান্ত প্রশ্নের বিষয়ে শুনানির জন্য হাইকোর্টে তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে দেন। শুনানি শেষে বৃহস্পতিবার এ রায় দেন আদালত।