অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, ‘সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তির ভোটে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিলে সংবিধান লঙ্ঘিত হবে।’
আজ মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) খালেদা জিয়ার প্রার্থিতার বিষয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দ্বিধাবিভক্ত আদেশের পর নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পক্ষে তিনটি রিট পিটিশন করা হয়েছিল। রিট আদেশে হাইকোর্ট দ্বিমত পোষণ করেছেন। যেহেতু দু’জন বিচারপতি ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেননি, সেজন্য বিষয়টি প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে। প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে তিনি পরবর্তী বেঞ্চ নির্ধারণ করে দেবেন।’
মাহবুবে আলম বলেন, ‘সম্প্রতি বিএনপির ৫ নেতা ভোটে অংশ নেবেন। তাদের দণ্ড ও সাজা স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করলে তা খারিজ হয়ে যায়। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেন বিএনপির এক নেতা। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সম্প্রতি হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ সাবিরা সুলতানা মুন্নী নামের এক প্রার্থীর সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে তাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আপিল বিভাগ ওই আদেশ স্থগিত করে দিয়েছেন। আপিল বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দণ্ডিত ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই। এরপরেও দণ্ডিতদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হলে তা হবে সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপন্থি।’
এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এটাতো পূর্ব নির্ধারিত বিষয় যে কোনও ব্যক্তি দণ্ডপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কাজেই আমি তো প্রথম থেকেই বলে আসছি কোনও আদালত এ রকম আদেশ দিতে পারে না। যে আদেশের ফলে সংবিধানের একটি বিধান অকার্যকর হয়ে যায়।’
বিএনপি নেতা ইকবাল মাহমুদ টুকু ও রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর মনোনয়ন গ্রহণে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তিনি অনেক আগেই এই দণ্ড স্থগিত করতে আবেদন করেছিলেন। সেই পিটিশন হাইকোর্টে অ্যালাও করা আছে এই যুক্তিতে একটি বেঞ্চ তাদেরকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের জন্য আদেশ দিয়েছেন।’
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা কীভাবে নির্বাচন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নাজমুল হুদার ব্যাপারে আমি জানি না কোন যুক্তিতে তাকে দেওয়া হয়েছে। তার কাগজপত্র না দেখে আমি কোনও কথা বলতে পারবো না। কিন্তু আমার সামনে খালেদা জিয়ার কাজগপত্র আছে। তিনি তো দণ্ডপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি। এখন দণ্ডভোগ করছেন। তার ব্যাপারে তর্কের কোনও অবকাশ নেই। যেহেতু এখন বিচারাধীন আছে আমি এর বেশি কিছু বলবো না।’
তিনি আরও বলেন, কোনও ব্যক্তি সংক্ষুব্ধ হলে আদালতে আসতে পারেন। দুর্নীতির দায়ে দণ্ডিত কোনও ব্যক্তি নির্বাচনের যোগ্য ঘোষণা করার আদেশে যে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে আদালতে আসতে পারে। তার কারণ সংবিধানের বিধি-বিধান সম্মত রাখা সবারই দায়িত্ব। এটা রাষ্ট্রেরও দায়িত্ব। আমি এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলবো।
খালেদা জিয়ার এ আবেদনের বিষয়ে শুনানি দ্রুত শেষ করা হবে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিশ্চয়ই প্রধান বিচারপতি দ্রুত শুনানির আদেশ দেবেন। যত তাড়াতাড়ি এ বেঞ্চ আদেশে স্বাক্ষর করে প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠাবেন, আশা করি প্রধান বিচারপতি তড়িৎ গতিতে ব্যবস্থা নেবেন।’
প্রসঙ্গত, বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করতে পারবেন কিনা- সে বিষয়ে মঙ্গলবার বিভক্ত আদেশ দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বিভক্ত এ আদেশ দেন।