নির্বাচনে প্রার্থিতা নিয়ে উচ্চ আদালত থেকে একের পর এক নির্দেশনা আসায় কমিশন কিছুটা উদ্বিগ্ন ও ব্যতিব্যস্ত বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদ। নির্দেশনার কারণে আসনভিত্তিক ব্যালট পেপার ছাপানো নিয়ে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে বলেও জানান তিনি। আদালতের আদেশের কথা বলতে গিয়ে সচিব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের প্রার্থিতার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘হিরো আলম পর্যন্ত আমাদের হাইকোর্ট দেখায়। সেও বলে যে, নির্বাচন কমিশনকে আমরা হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ছি। বোঝেন অবস্থা!’
আজ বুধবার (১৯ ডিসেম্বর) সকালে আগারগাঁওয়ে ইটিআই ভবনে নির্বাচনের দিন সফটয়্যার সংক্রান্ত ইলেকশান ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (ইএমএস), ক্যান্ডিডেট ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (সিআইএমএস) এবং রেজাল্ট ম্যানেজমেন্ট সিসটেম (আরএমএস) প্রশিক্ষণে তিনি এসব কথা বলেন।
ইসি সচিব বলেন, ‘এপর্যন্ত অনেক আসনে আমাদের প্রার্থী চূড়ান্ত হয়নি। কিছু বোধ হয় আরও পরিবর্তন হবে। যেখানে প্রার্থী একদম চূড়ান্ত হয়ে গেছে সেগুলোর ব্যালট ছাপিয়ে ফেলবো। কারণ, আমরা চাই এক সপ্তাহ পূর্বে ব্যালট মাঠে চলে যাবে। যেখানে সমস্যা আছে— সেখানে ব্যালট আমরা একটু পরে ছাপাবো। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে নির্দেশনা আসলে আমাদেরকে সেইভাবে অ্যাকুমুলেটেড করতে হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘হিরো আলম পর্যন্ত হাইকোর্ট দেখায়। সেও বলে যে, নির্বাচন কমিশনকে আমরা হাইকোর্ট দেখিয়ে ছাড়ছি। বোঝেন অবস্থা! সে তো স্বতন্ত্র প্রার্থী। সে বগুড়া থেকে দাঁড়িয়েছে। প্রথমে রিটার্নিং কর্মকর্তা তার মনোনয়ন বাতিল করেছে। তারপর আমাদের কাছে আপিল করেছে। মাননীয় কমিশন তার আপিল বাতিল করেছে। তারপর সে হাইকোর্টে গিয়ে তারটা ক্লিয়ার করে আসছে। তারপর আগের তালিকার সঙ্গে তার (হিরো আলম) প্রতীক সংযুক্ত করে আমাদের কাছে পাঠিয়েছে। মহামান্য হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন নির্দেশনা আসছে। আমরা এগুলো নিয়ে একটু উদ্বিগ্ন এবং ব্যতিব্যস্ত।’
সচিব বলেন, ‘৩০০ আসনে নির্বাচন করা একটা বিশাল ব্যাপার। দেশে যদি রাজনৈতিক সুপরিবেশ থাকে, তাহলে আমাদের কাজ করতে সুবিধা হয়। আর যদি সুপরিবেশ না থাকে, সবসময় আমাদেরকে বিতর্কের মধ্যে পড়তে হয়।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে টেলিভিশন খুললেই, পত্রিকা খুললেই নির্বাচন নিয়ে কথা দেখা যায়। বাংলাদেশের সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ নির্বাচন নিয়ে উন্মুখ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনাররা রুট লেভেল পর্যন্ত যাচ্ছেন, সভা করছেন, কথা বলছেন। এর উদ্দেশ্য নির্বাচনটা যাতে সুশৃঙ্খল হয়, সুন্দর, সুষ্ঠু হয়, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এটাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের এত ব্যাপক কর্মযজ্ঞ কিন্তু আর কখনও গ্রহণ করা হয়নি। আমি ৩১ বছর ধরে মাঠে আছি। আমি নিজে রিটার্নিং, সহকারী রিটার্নিং অফিসার ছিলাম, ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এত বিশাল কর্মযজ্ঞ এর আগে কখনও দেখিনি। নতুন করে যোগ হয়েছে ইভিএম। ইভিএম নিয়েও আমরা নির্বাচন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দফায় দফায় প্রশিক্ষণ দিয়েছি।’
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ করে সচিব বলেন, ‘এখন আমাকে একটি কথা বলেন তো— বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানরা আমাদেরকে অনুরোধ জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনার জন্য। ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে আনলে আপনাদের রেজাল্ট পাঠাতে খুব অসুবিধা হবে? জবাবে প্রশিক্ষণার্থীরা জানান সমস্যা হবে। প্রশ্ন করেন, আপনারা রেজাল্ট পাঠাবেন কখন থেকে? বিকাল পাঁচটা থেকে। পাঁচটার আগ পর্যন্ত যদি গতি কম থাকে? তখন প্রশিক্ষণার্থীরা জানান, সমস্যা নাই।
ইন্টারনেটের গতি ভোটের দিন বিকাল চারটার পরে ফুল স্পিডে থাকলে কোনও সমস্যা হবে না বলে মনে করেন তিনি।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ করে ইসি সচিব আরও বলেন, ‘আপনারা খুব সতর্ক হয়ে কাজ করবেন। একটা সংখ্যার এদিক-সেদিক হলে কিন্তু ওই এলাকায় মারামারি শুরু হয়ে যাবে। এগুলো আপনারা সাবধানে করবেন। আপনারা খুব সতর্কতার সঙ্গে, সুন্দরভাবে, ঠাণ্ডা মাথায় এ কাজটা করবেন।’