ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা ২৫ জামায়াত প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের সুযোগ প্রচলিত আইনে নেই, এছাড়া আদালতের আদেশে যেসব আসনে বিএনপি প্রার্থীদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে সেখানে নতুন করে তফসিলের আইনগত সুযোগও নেই বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশন সচিব রোববার (২৩ ডিসেম্বর) রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন। সিদ্ধান্তটি আজ সোমবারের (২৪ ডিসেম্বর) মধ্যে হাইকোর্টকে জানিয়ে দেবে নির্বাচন কমিশন।
যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে নির্বাচন কমিশনের কাছে নিবন্ধন হারানো জামায়াত ইসলামীর ২৫ প্রার্থীর মধ্যে ২২ জন বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে এবং বাকি ৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত রুল জারি করে জানতে চেয়েছেন কেন তাদের প্রার্থিতা বৈধতা দিয়েছে ইসি।
এর আগে বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠকে জামায়াত নেতাদের প্রার্থিতা থাকবে কিনা, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, বৈঠকে জামায়াতের প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রসঙ্গে কমিশনের বৈঠকে পক্ষে বিপক্ষে মতামত আসে। তবে আইন পর্যালোচনা করে কমিশন তাদের প্রার্থিতা বাতিলের মতো কোন আইনি ব্যাখ্যা পায়নি। এ বিষয়ে কমিশন থেকে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, আরপিও অনুযায়ী তারা নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বিএনপির মনোনিত প্রার্থী। সে অনুযায়ী তারা দলটির প্রতীক হিসেবে ‘ধানের শীষ’ বরাদ্দ পেয়েছেন। তারা জামায়াত বা অন্য কোন দলের কিনা সে বিষয়টি সুস্পষ্ট নয়। ফলে প্রার্থী হিসেবে তারা জামায়াতের কিনা তা প্রমাণের সুযোগ নেই। এসব বিষয় বিবেচনা করে কমিশন মনে করে তাদের প্রার্থিতা বাতিলের কোন সুযোগ নেই। সিদ্ধান্তটি কমিশন সোমবারের মধ্যে হাইকোর্টকে জানিয়ে দেবে।
জামায়াতের ২৫ জন নেতা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এদের মধ্যে ২২ জন ধানের শীষে ও বাকিরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছে। জামায়াত প্রার্থীরা হলেন,দিনাজপুর-১ মোহাম্মদ হানিফ, দিনাজপুর-৬ মোহাম্মদ আনোয়ারুল ইসলাম, নীলফামারী-২ মনিরুজ্জামান মন্টু, নীলফামারী-৩ মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম, গাইবান্ধা-১ মাজেদুর রহমান সরকার, সিরাজগঞ্জ-৪ মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, পাবনা-৫ মাওলানা ইকবাল হুসাইন, ঝিনাইদহ-৩ অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যশোর-২ আবু সাঈদ মুহাম্মদ শাহাদাত হোসাইন, বাগেরহাট-৩ অ্যাডভোকেট আবদুল ওয়াদুদ, বাগেরহাট-৪ অধ্যাপক আবদুল আলীম, খুলনা-৫ অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, খুলনা-৬ মাওলানা আবুল কালাম আযাদ, সাতক্ষীরা-২ মুহাদ্দিস আবদুল খালেক, সাতক্ষীরা-৩ মুফতি রবিউল বাশার, সাতক্ষীরা-৪ গাজী নজরুল ইসলাম, পিরোজপুর-১ শামীম সাঈদী, ঢাকা-১৫ ডা. শফিকুর রহমান, সিলেট-৬ মাওলানা হাবিবুর রহমান, কুমিল্লা-১১ ডা. আবদুল্লাহ মো. তাহের, চট্টগ্রাম ১৫ আ ন ম শামসুল ইসলাম ও কক্সবাজার-২ হামিদুর রহমান আযাদ।
জামায়াতে ইসলামীর ওই ২৫ প্রার্থীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে গত সোমবার (১৭ ডিসেম্বর) তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী একটি রিট দায়ের করেন। গত সোমবার ও মঙ্গলবার রিটের শুনানি হয়। ১৮ ডিসেম্বর বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ বিষয়ে রিট শুনানি শেষে রুল জারি করে আদেশ দেন। আদেশে তরিকত ফেডারেশনের মহাসচিবসহ চারজনের আবেদন তিনদিনের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল।