সংসদ সদস্যদের মেয়াদকাল ও শপথ নিয়ে সংবিধানে কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। এক্ষেত্রে দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ সংসদের নব নির্বাচিত সদস্যরা শপথ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে চলছে বিভিন্ন আলোচনা। তবে, সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আগেভাগে শপথ নিতে আইনি কোনও বাধা নেই। এক্ষেত্রে আগের (দশম) সংসদ আপনা-আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
সংবিধানে বলা আছে, সংসদের মেয়াদ অবসানের প্রেক্ষাপটে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতরা মেয়াদ অবসানের আগে তাদের কার্যভার গ্রহণ করবেন না। আবার সংবিধানের অন্য একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে— শপথ আবশ্যক এমন ক্ষেত্রে শপথ নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হবে। সংসদ সদস্য পদের জন্য সংবিধান অনুসারে শপথ নেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এক্ষেত্রে সংবিধানে বলা হয়েছে [১৪৮ (৩)]— এই সংবিধানের অধীন যে ক্ষেত্রে কোনও ব্যক্তির পক্ষে কার্যভার গ্রহণের পূর্বে শপথগ্রহণ আবশ্যক, সেই ক্ষেত্রে শপথ গ্রহণের অব্যাবহিত পর তিনি কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হবে।
অন্যদিকে, সংসদ সদস্যদের দায়িত্বের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১২৩ (২)(খ) অনুচ্ছেদে বলা— তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
উল্লেখ্য, (ক) উপধারায় মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এক্ষেত্রে ১৪৮ অনুচ্ছেদে শপথের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের কথা বলা হলেও ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে— আগের সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে নতুনরা দায়িত্ব নিতে পারবেন না।
এদিকে, সংবিধানে সংসদের মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে— [৭২(৩)] রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে।
সংবিধানের বিধান মতে, ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামি ২৮ জানুয়ারি। সংবিধানের ১২৩ বিধান মানা হলে ওই সময়ের আগে এবারের নির্বাচিত এমপিরা দায়িত্ব নিতে পারছেন না। আবার ১৪৮ বিধান মতে, এক্ষেত্রে কোনও বাধাও থাকছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের ফলাফলের গেজেট প্রকাশিত হলে তিন দিনের মধ্যে শপথ পড়ানোর বাধ্যবাধকতা আছে। আর যেসব পদে শপথ নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে, সেখানে শপথ নিলেন মানেই দায়িত্ব নিয়েছেন। এক্ষেত্রে আইনে কোনও ব্যত্যয় হবে না। আর আগের সংসদ সদস্যদের পদ আপনা-আপনি বিলুপ্ত হবে।’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘সংবিধানে মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে কার্যভার না গ্রহণের কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে সংসদ সদস্যদের শপথ হলে আইনগত কোনও সমস্যা হবে না।’ তিনি বলেন, ‘গেজেট হলেই শপথের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর শপথ নিলেই তারা দায়িত্ব নিয়েছেন বলে গণ্য হবে এবং এতে আগের সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না, বা মেয়াদ পর্যন্ত অপেক্ষারও দরকার হবে না। রাষ্ট্রপতি চাইলে বর্তমান সংসদের মেয়াদের আগেও অধিবেশন আহ্বান করতে পারবেন।’
এদিকে, সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৩ জানুয়ারি) সংসদ সদস্যদের শপথ হলেও একাদশ সংসদের প্রথম অধিবেশন ২৮ জানুয়ারির পরেই অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি গেজেট প্রকাশের দিন ধরলে আগামি ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত বৈঠক অনুষ্ঠানের সময় রয়েছে। সংবিধানের বলা হয়েছে [৭২ (২)]— যেকোনও সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষিত হওয়ার (গেজেট প্রকাশ) ৩০ দিনের মধ্যে সংসদের বৈঠক আহ্বান করতে হবে।